থাইল্যান্ডে ৫১ মানবপাচারকারী আটক
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মানবপাচারের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড়ের পর এখন পর্যন্ত ৫১ জন চিহ্নিত মানবপাচারকারীকে আটক করেছে থাইল্যান্ডের সরকার। খোঁজা হচ্ছে আরো ৩০ মানবপাচারকারীকে। মানবপাচারের দায়ে নতুন করে আরো চার সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড পুলিশের ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল পুত্থিচাট একাচানের বরাতে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, নতুন করে চারটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট ৮১ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হলো। এদের মধ্যে ৫১ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ৩০ জনকে খোঁজা হচ্ছে।
পুত্থিচাট আরো জানান, মূলত শংখলা, সাতুন ও রানোঙ্গ এলাকায়ই সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীদের আস্তানা। এদের ধরতে গত সপ্তাহে উদ্ধার করা মিয়ানমারের ১২ অধিবাসীকে দিয়ে ওই চার অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া পুলিশ মানবপাচারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্যম্পের ছবি তুলে এবং জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বাকিদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে।
শংখলা প্রদেশের পুলিশের সহকারী কমিশনার কর্নেল ত্রিউইত শ্রিপাপা বলেন, ওই ১২ রোহিঙ্গা অভিবাসীকে শংখলার সাদাও জেলায় আনা হয়েছে। অভিবাসীদের যেসব ক্যাম্পে আটক করে রাখা হয়েছিল, তারা ওই ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা মনে করতে পারছে। তারা পুলিশকে ওই সব ক্যাম্পের বিস্তারিত জানিয়েছে। এখন তাদের দিয়ে ওই ক্যাম্পগুলো ও সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হবে।
এরই মধ্যে অবৈধ মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার ঘটনায় থাইল্যান্ডের অধিবাসী এক নৌ-মালিককে আটক করেছে মিয়ানমার পুলিশ। এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে ওই নৌকা থেকে দুই শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করেছিল সে দেশের নৌবাহিনী। গতকাল শনিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আটক ওই নৌ-মালিক থাইল্যান্ডের নাগরিক। ৫৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে আটক করা হয়।
থাই পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে গ্লোবাল নিউ লাইটস অব মিয়ানমার পত্রিকা। আটক ওই ব্যক্তির নাম নাইংনাট পাতুনসানতুন। তিনি বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার করতেন বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। তবে কবে নাগাদ ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, সে বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মিয়ানমার পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো লোকজনকে আটক করার পরিকল্পনা করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ মে একটি থাই জেলেনৌকা থেকে ২০৮ জনকে উদ্ধার করেছিল মিয়ানমারের নৌবাহিনী। আটক সবাই বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার। তবে রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তাদের দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। রয়টার্স প্রতিবেদকরা সরেজমিনে তদন্ত চালানোর সময় ওই দলে কমপক্ষে আট রোহিঙ্গা দেখতে পেয়েছিলেন। ২৯ মে আরো ৭২৭ অভিবাসীকে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত মাসে থাইল্যান্ডের পাহাড়ি জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান।
বাংলাদেশেও এই মানবপাচার ঠেকাতে চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান। অভিযানে অংশ নিচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। এই অভিযানে শুধু গ্রেপ্তারই নয়, এরই মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে চার মানবপাচারকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। আর তাদের হাতে আছে ৩২৫ মানবপাচারকারীর নামের তালিকা।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাচারকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। চলমান অভিযানে মানবপাচারকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, এ সময়ের মধ্যেও থেমে নেই মানবপাচারকারীরা। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাঠানোর সময় গত তিন দিনে আসামিদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে আরো পাঁচজনকে।
গত মাসে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে পাহাড়ি জঙ্গলে বন্দিশিবিরের খোঁজ পায় পুলিশ। গত ১ মে এক শিবিরে একটি গণকবর থেকে ২৬ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এই বন্দিশিবিরে পাচার বা অপহরণের শিকার হওয়া পাঁচ শতাধিক অভিবাসীকে মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে বলে বেঁচে যাওয়া একজনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। এসব বন্দীর অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলেও এসব প্রতিবেদনে বলা হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইউএনবি জানায়, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যাপারে প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা সারা দেশ থেকে লোক জড়ো করে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে উখিয়া উপজেলায় আনে। এর পর ছোট ছোট নৌকায় করে সমুদ্রে জাহাজে তুলে নিয়ে যায়।
থাইল্যান্ডের শিবিরে আটকে রেখে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে মুক্তিপণ আদায় করা হতো বলে অভিযোগও পাওয়া গেছে।