যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সাত দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মুসলিমবিরোধী কি না, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন দেশটির আদালত।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দেশটির সানফ্রান্সিসকোর আপিল কোর্ট এক আদেশের সময় বিষয়টি জানতে চান।

এর আগে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর ট্রাম্পের জারি করা নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন দেশটির একটি ফেডারেল আদালত।

বিবিসির খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সানফ্রান্সিসকোর আপিল কোর্টে ওই সম্পর্কে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আর শুনানিতে আদালত দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে কি না।

বিচারক রিচার্ড ক্লিফটন প্রশ্ন করে বলেন, এই নিষিদ্ধ করা সাত দেশে বিশ্বের মোট মুসলমানদের ১৫ শতাংশ বাস করে। আর এই আদেশ তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এ সময় বিচারক জানতে চান, এই আদেশ (নির্বাহী আদেশ) সরাসরি মুসলমানের বিপক্ষে। আর এই আদেশ মুসলমানদের উদ্দেশ করেই দেওয়া হয়েছে কি না।

পরে এই বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচারক প্যানেলের সামনে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। পরে সানফ্রান্সিসকোর নবম সার্কিট কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা মুলতবি ঘোষণা করেন। আদালত এই বিষয় নিষ্পত্তির দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করেন।

এর আগে সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সমর্থন জানায় দেশটির জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট।

দেশটির আদালতের জারি করা স্থগিতাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করা হয়েছে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে।

ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাতটি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারভুক্ত। এটি মুসলিমদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়।

গত শুক্রবার ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহর আদালতের বিচারক জেমস রবার্ট সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশ স্থগিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বৈধ ভিসাধারী অভিবাসী ও শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সাময়িক স্থগিত করেন দেশটির আরেকটি আদালত।

ক্ষমতায় বসার পরপরই সাতটি মুসলিম দেশ ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সাতটি দেশ হলো সিরিয়া, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইসলামী জঙ্গিদের দূরে রাখার জন্য এটি একটি পদক্ষেপ। আমরা তাদের এখানে চাই না।’

‘যারা আমাদের সেনাদের জন্য হুমকি, তাদের আমরা নিতে পারি না। আমরা তাদেরই নেব, যারা আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসে।’

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ভোটে ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি ক্লিনটনকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি।

দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সদ্য বিদায়ী বারাক ওবামার বেশ কয়েকটি আদেশ বাতিল করে দেন। এর মধ্যে আছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘ওবামাকেয়ার’। এ ছাড়া মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। নর্থ ডাকোটায় তেল পাইপলাইন নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। যদিও বিক্ষোভের মুখে বারাক ওবামা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার দিনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এদের বেশির ভাগই নারী। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।