‘সীমান্তে হত্যাকে বৈধতা দেওয়া হলো’
ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারেও আসামিকে খালাস করে দেওয়ার মাধ্যমে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) নিরীহ মানুষকে হত্যার বৈধ্যতা দেওয়া হলো। ফেলানী হত্যা মামলায় আইনি সহায়তাকারী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন এ মন্তব্য করেছেন।
আব্রাহাম জানান, গত তিনদিন একটানা পুনর্বিচারিক কার্যক্রম চলার পর বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে পূর্বের রায় বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন বিএসএফের কর্মকর্তা সিপি ত্রিবেদির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক প্যানেল। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এটি ন্যায়বিচার নয়। বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল, যেহেতু এটি একটি পুনর্বিচার, সেহেতু অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তিই ছিল প্রত্যাশিত রায়।’
দীর্ঘদিন মুলতবির পর বিজিবি-বিএসএফের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্তে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করেন বিএসএফের বিশেষ আদালত। এরপর এ বছরের ৩০ জুন বিএসএফের বিশেষ আদালতে পুনর্বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কঠোর গোপনীয়তায় তিনদিন বিচারিক কার্যক্রম চলার পর গতকাল রাতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ফেলানী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম। তাঁরা ফেলানী হত্যা মামলাটি ভারতের উচ্চ আদালতে নিয়ে সুবিচারের জন্য ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান।
পাশাপাশি ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার পেতে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-৪৫ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি শুনতে পেয়েছেন তবে রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত এর বেশি জানানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ জওয়ান অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী। এ হত্যাকাণ্ডে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেন বিশেষ আদালত। ২০১৫ সালে মামলার পুনর্বিচারেও একই রায় বহাল রাখেন আদালত।