জিম্বাবুয়েতে মুগাবে-বিরোধী সমাবেশ, পেছনে সেনা
জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনী হাতে নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের বিরুদ্ধে রাজধানীর হারারেতে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে তাঁর নিজের দলের নেতারা অংশ নিলেও এর পেছনে সেনাবাহিনী রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এক বছর আগেও যেসব নেতা ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রবার্ট মুগাবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাই এখন ‘প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর’ আওয়াজ তুলছেন।
গতকাল শুক্রবার জিম্বাবুয়ের ডিফেন্স ফোর্সের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে একে একটি ‘সংহতি সমাবেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী আশা করছেন, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এটি শান্তিপূর্ণ হবে।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়েকে স্বাধীন করেছিলেন মুগাবে। তখন থেকেই তিনি দেশটির ক্ষমতায় আছেন। এই সময়ে ‘আফ্রিকার রুটির ঝুঁড়ি’ হিসেবে খ্যাত দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এর জন্য স্বল্প সংখ্যক শ্বেতাঙ্গের হাতে থাকা দেশটির বৃহৎ জমি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ‘ভূমি-নীতি’কে দায়ী করা হয়।
গত বুধবার এক ‘রক্তপাতহীন অভ্যূত্থানের’ মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ‘মুগাবেকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের’ বিরুদ্ধেই এই অভিযান বলেও সেনবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তখন থেকেই তিনি গৃহবন্দি থাকলেও গতকাল শুক্রবার প্রথমবারের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুগাবে।
এর মধ্যে মুগাবের দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন বা জানু-পিএফ এর পক্ষ থেকে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানোনো হয়েছে। দেশটির ১০টি আঞ্চলিক কমিটির মধ্যে আটটি কমিটির নেতারাই মুগাবের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে টেলিভিশনে বক্তব্যও দেন। দলের পক্ষ থেকে মুগাবেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পাশাপাশি দলের সম্পাদকের পদ ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে দল থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে মুগাবের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে, যিনি দলের মধ্যে ‘জেনারেশন-৪০’ নামে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। দলের নেতারা বরখাস্ত হওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে দলীয় পদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। বর্তমান সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণের জন্য সপ্তাহান্তে জানু-পিএফ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভাও আহ্বান করা হয়েছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে বরখাস্ত করে অর্ধেকের কম বয়সী স্ত্রী গ্রেসকে উত্তরসূরী করা নিয়ে মুগাবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ক্ষমতাসীন দলের। আর সেই সুযোগে ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনী চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
সেনাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা মুগাবের ‘কাছাকাছি হচ্ছে’। তাঁর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ জনগণকে অবহিত করা হবে।
জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংগঠনের নেতা ক্রিস্টোফার মুটৎভাঙ্গাওয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। যে কাজটা সেনাবাহিনী শুরু করেছে, আমরা সেটা শেষ করতে চাই। মুগাবের অবশ্যই চলে যেতে হবে।’