রসগোল্লা তুমি কার?
রসগোল্লার স্বত্ব নিয়ে ভারতের প্রতিবেশী দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মধ্যে এখন তিতকুটে সম্পর্ক। বিতর্ক পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত। সম্প্রতি ওড়িশা সরকার রসগোল্লাকে নিজেদের আবিষ্কার বলে দাবি করেছে। কিন্তু বাঙালি তা মানবে কেন? রসগোল্লার স্বত্ব পেতে মাঠে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ।
সম্প্রতি রসগোল্লা আবিষ্কারের পীঠস্থান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ওড়িশার সরকার ভৌগোলিক নির্দেশক পাওয়ার আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এমনকি গত ৩০ জুলাই ওড়িশাজুড়ে পালিত হয়েছে ‘রসগোল্লা’ দিবস। কিন্তু যে রসগোল্লা বাঙালির গর্ব, সেই রসগোল্লাকে ছিনতাই করবে ওড়িশা? এটা মেনে নিতে পারেনি বাংলা। ব্যাস। কোমর বেঁধে রসগোল্লার স্বত্ব পেতে কোমর বেঁধে ময়দানে নেমে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গও।
রসগোল্লার স্বত্ব উদ্ধারে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা শহরের বিখ্যাত মিষ্টি প্রস্তুতকারক নবীনচন্দ্র দাসের পরিবারও। কলকাতার নবীনচন্দ্র দাসের পরিবারের দাবি, ভারত ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়া রসে টইটুম্বুর গোলাকৃতি মিষ্টান্নটির সৃষ্টি হয়েছিল তাঁদের পরিবারের হাত ধরেই। ১৮৬৮ সালে তৎকালীন সুতানুটি যা বর্তমানে বাগবাজার নামে পরিচিত সেখানেই ছিল নবীন ময়রার মিষ্টির দোকান। সেই নবীন ময়রাই সর্বপ্রথম ছানার মণ্ডকে চিনির রসে ডুবিয়ে তৈরি করেছিলেন রসগোল্লা।
অন্যদিকে, ওড়িশার পাল্টা দাবি, রথযাত্রা শেষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা লক্ষ্মী দেবীর মানভঞ্জন করার জন্য ভগবান জগন্নাথদেব ছানার ক্ষীরমোহন খাইয়েছিলেন লক্ষ্মী দেবীকে। সেই ছানার ক্ষীরমোহনই নাকি আসল রসগোল্লা। এই দাবি নিয়ে ওড়িশা সরকার রীতিমতো পশ্চিমবঙ্গকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে।
তবে কলকাতার বিশিষ্ট মিষ্টি গবেষক হরিপদ ভৌমিকের কথায়, ওড়িশার যুক্তি নাকি বেজায় ঠুনকো। তাঁর কথায়, ‘মূলত ওড়িশা যে ক্ষীরমোহনকে রসগোল্লার মর্যাদায় তুলতে চাইছে সে ক্ষেত্রে মিষ্টির প্রধান উপকরণে ক্ষীরের উল্লেখ রয়েছে। ফলে, এটা স্পষ্ট ওড়িশার ওই মিষ্টি ক্ষীরের তৈরি। ছানার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ছানা ও ক্ষীর দুটোই দুগ্ধজাত খাবার হলেও সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে তা তৈরি হয়। ফলে ছানার ক্ষীরমোহন বিষয়টি মূলত সোনার পাথরবাটির সমতুল্য বিষয়। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, কোনো মিষ্টি নতুন করে প্রস্তুত হওয়ার পর যদি সেটি কোনো দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়, তাহলে সেই দেবতার নামেই ওই মিষ্টির নাম সচরাচর হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মী দেবীকে ক্ষীরমোহন খাওয়ানোর তত্ত্বকে আঁকড়ে ওড়িশা সরকার যতই রসগোল্লা তৈরির দাবি তুলুক না কেন, আদতে রসগোল্লার ইতিহাস স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে এর জন্মস্থান বাংলা।’ ওড়িশার দাবি যথেষ্ট ঠুনকো বলেই মনে করেন তিনি। হরিপদবাবু জানান, ‘আদি রসগোল্লার উৎপত্তি হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার হাত ধরে। তারপর সেই রসগোল্লা শান্তিপুর হয়ে কলকাতায় এসে পৌঁছায়। সেই আদি রসগোল্লাকেই ছানা ও চিনির সিরা সহযোগে সুস্বাদু স্পঞ্জ রসগোল্লায় উন্নীত করেন নবীন ময়রা।’ আর এসব তথ্যের ভিত্তিতেই রসগোল্লা সৃষ্টির আদি গৌরব কোনো মতেই ছাড়তে রাজি নয় পশ্চিমবাংলা। ফলে বাঙালির প্রিয় রসগোল্লা নিয়ে এখন বাংলা-ওড়িশা দড়ি টানাটানি তুঙ্গে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র রসগোল্লার আদিস্বত্ব কোন রাজ্যের হাতে ন্যস্ত করে?