যে কারণে বাতিল ভারত-পাকিস্তান আলোচনা
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে আলোচনায় বসার কথা ছিল আগামীকাল সোমবার। কিন্তু শুরুর আগেই বাতিল হয়েছে ওই বৈঠক। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কড়া শর্তের কথা তুলে শনিবার রাতে বৈঠক বাতিল করেছে পাকিস্তান।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা বাতিল হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও দুই দেশের কূটনীতিকদের কড়া অবস্থানের কারণে অনেক আলোচনা বাতিল হয়েছে। আর আলোচনা বাতিলের এটিই শেষ নয়। ভবিষ্যতেও এমন আলোচনা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা আছে। আজকের প্রস্তাবিত বৈঠক নিয়ে গত শুক্র ও শনিবার দুই দেশের মধ্যে বেশ নাটকীয় ঘটনার অবতারণা হয়, যা সংবাদমাধ্যমেও বেশ আলোচিত হয়। সবেশেষে কূটনৈতিক আলোচনা বাতিলের মাধ্যমে নাটকের যবনিকা পতন।
দুই দেশের নিরাপত্তা উদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় কী হতো তা নিয়েও বিরোধ ছিল। গত ১০ জুলাই রাশিয়ার উফা শহরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরিফের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাঁরা একটি যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার করেন। এতে বলা হয়, শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।
পূর্বেই আলোচ্য বিষয় ঠিক করা হলেও পাকিস্তান এতে বাগড়া দেয়। কাশ্মীর সমস্যা ও সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করার ইচ্ছার প্রকাশ করে পাকিস্তান। এভাবে ‘সব অনিষ্পন্ন বিষয়’ আলোচনায় যুক্ত করতে চায় তারা। কোনো কূটনৈতিক আলোচনা ছাড়াই বৈঠকে হুরিয়াত নেতাদের আমন্ত্রণ জানায় পাকিস্তান।
কাশ্মীর সমস্যা ও হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে আপত্তি তোলে ভারত। কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল থাকে পাকিস্তান। সবশেষে শনিবার রাতে ইসলামাদের সংবাদ সম্মেলন করে নিরাপত্তা উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বলেন, তিনি ভারত যেতে আগ্রহী, তবে ভারতের দেওয়া শর্ত মেনে তা সম্ভব নয়।
গত বছর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদির জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টারা নিশ্চিত করেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও আলোচনা একই সঙ্গে চলতে পারে না। পূর্বে পাকিস্তানের সব সরকারপ্রধানই ভারত সফরে হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ পেতেন। তবে এই বিষয়টি বন্ধ করেছে মোদি সরকার।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ হলেও দেশের পররাষ্ট্রনীতির নির্ধারক আরেক শরিফ—জেনারেল রাহিল শরিফ। নীতিনির্ধারণে আরো ভূমিকা রাখেন রাওয়াল পিন্ডিতে জেনারেলের সদর দপ্তরে থাকা অপর জেনারেলরা। কয়েক মাস আগেই জেনারেল শরিফ তাঁর অগ্রাধিকারের কথা তুলে কাশ্মীরকে বলেন ‘দেশভাগের অমীমাংসিত বিষয়’।
ভারতের সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের পরিচালক সাবেক কমোডর সি উদয় ভাস্কর বলেন, ভালো সম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের চেষ্টা ব্যর্থ। পাকিস্তান সরকারের মধ্যেই বেশ কিছু ভিন্নমতাবলম্বী আছে। এই বাস্তবতা অগ্রাহ্য করা যায় না।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের কূটনৈতিক প্রতিবেদক বাকির সাজ্জাদ বলেন, আলোচার বিষয়বস্তু দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলোচনায় ভারতের আগ্রহ সন্ত্রাসবাদ আর পাকিস্তান অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী।