থাইল্যান্ডে ফুটবলারদের অক্সিজেন দিতে গিয়ে ডুবুরির মৃত্যু
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/07/06/photo-1530868772.jpg)
থাইল্যান্ডের গুহায় আটকা পড়া সেই কিশোর ফুটবলারদের কাছে অক্সিজেন পৌঁছাতে গিয়ে মারা গেছেন দেশটির নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামান গুনান (৩৮)।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যম বিবিসির মাধ্যমে এ তথ্য জানা যায়। এদিকে, গুহায় ধীরে ধীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে। এখন হাতে কয়েক মাস না, হাতে খুব কম সময় আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
১১ দিন আগে দেশটির চিয়াং রাই অঞ্চলের থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে ১২ ফুটবলারসহ তাদের কোচ। নিখোঁজের নয় দিন পর গত মঙ্গলবার তাদের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে বন্যার পানির কারণে তাদের উদ্ধার করা যাচ্ছিল না। তাই তাদের কাছে নিয়মিত খাবার, অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছানোর কাছ করছিলেন উদ্ধারকর্মীরা।
নিহত সামান গুনান এখন আর নৌবাহিনীতে কর্মরত নেই। তবে এই কিশোরদের উদ্ধারকাজে অংশ নিতে এসেছিলেন তিনি।
চিয়াং রাই অঞ্চলের ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘তাঁর দায়িত্ব ছিল অক্সিজেন সরবরাহ করা। কিন্তু গুহা থেকে ফিরে আসার পথে তাঁর কাছে যথেষ্ট অক্সিজেন ছিল না। ফলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন।’ এরপর তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক ডুবুরি তাঁকে নিয়ে এলেও তিনি আর বেঁচে ওঠেননি।
থাইল্যান্ডের সিল কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আরপাকর্ন ইয়ুকংকাও সাংবাদিকদের বলেন, অক্সিজেন বোতল স্থাপন করে ফিরতে গিয়ে গুনান মারা গেছেন। তাঁর সঙ্গী তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। পরে আরেক চেম্বারে নিয়ে তাঁকে দ্বিতীয়বার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু তখনো তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সামরিক ওই কর্মকর্তা জানান, এই কিশোরদের উদ্ধারকাজে বিরতি নেওয়া হবে না। উদ্ধারকাজ চলবে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি যে, আমরা লক্ষ্যচ্যুত হবো না। আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না। আমাদের বন্ধুর এই মৃত্যু আমরা বৃথা যেতে দেবো না।’
নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও সাধারণ স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় এক হাজার উদ্ধারকর্মী এই উদ্ধারকাজে অংশ নিচ্ছেন।
দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই কিশোরদের উদ্ধার করতে হবে
গুনানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে যে একজন প্রশিক্ষিত, দক্ষ ডুবুরি যদি না পারেন, তাহলে এই বালকদের কী হবে? উত্তরে রিয়ার অ্যাডমিরাল আরপাকর্ন বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য তারা আরো বেশি প্রস্তুতি নেবে। কেননা, এই কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬-এর মধ্যে।এবং তাদের কোচের বয়স ২৫।’
তবে শঙ্কার বিষয় হলো কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, গুহায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমছে। সেখানে বিশাল সংখ্যক মানুষ কাজ করছে। ফলে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে আসছে।
নিখোঁজ হওয়ার প্রায় নয় দিন পর দুই ব্রিটিশ উদ্ধারকর্মী তাদের খুঁজে পান। গুহায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে, বন্যার পানিতে তারা আটকা পড়ে ছিল।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফুটবলারদের সবাই সুস্থ আছে বলে জানা গেছে। তাদের কাছে নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসা দ্রব্যাদি পাঠানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ তাদের নিরাপদে উদ্ধার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
এই উদ্ধারকাজের অংশ হিসেবে গুহার পানি সেচের মাধ্যমে কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু পানি না কমলে এই বাচ্চাদের পানিতে ডুবুরিদের মতো চলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নয়তো বা অপেক্ষা করতে হবে, বর্ষাকাল শেষ হওয়ার জন্য।
রিয়ার অ্যাডমিরাল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, বাচ্চারা এখানে অনেক সময়ের জন্য থাকতে পারবে। কিন্তু এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের হাতে সময় কম।’