‘প্রতিজ্ঞা করলাম আরো সতর্ক থাকব’

এক কিশোর বলল, ‘পানিটা পরিষ্কার ছিল। তবে কেবল পানিই ছিল, খাবার না।’ টাইটান নামের সবচেয়ে ছোট ছেলেটি বলল, ‘আমি চেষ্টা করছিলাম খাবার নিয়ে না ভাবতে। কারণে তা নিয়ে ভাবলে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে!’
অন্য এক কিশোর বলল, ‘প্রতিজ্ঞা করলাম আরো সতর্ক থাকব।’ আরেক কিশোর বলল, ‘এই অভিজ্ঞতাটা আমাকে ধৈর্য ধরা এবং শক্ত হতে শেখাবে।’
এসব কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ ১৭ দিন থাইল্যান্ডের গুহায় আটকা ছিল। প্রথম নয়দিন তাদের কোনো খোঁজই ছিল না। বিশ্বকাপের জমজমাট সময়ের মধ্যেও সারাবিশ্বের নজর পড়েছিল থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশে। গত ২৩ জুন থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। ওই ঘটনার ১৭ দিন পর গত ১০ জুলাই সবাইকে উদ্ধার করা হয়। তিনদিনের বেশ কয়েকটি অভিযানে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের পর থেকে ওই ১৩ জন হাসপাতালে ছিল। আজ বুধবার তারা বাড়ি ফিরে যায়। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানায়, ওই ১৩ জনকে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে আনা হয়। আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন। সেখানেই কিশোররা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানায়।
ওই দলটিতে থাকা একজনের নাম আদুল সাম-অন। ও ইংরেজি জানতো। ইংরেজিভাষী ডুবুরিরা যখন গুহার ভেতরে ডাকাডাকি করছিল তখন আদুলই সাড়া দেয় প্রথম। এমনকি ডুবুরিদের সঙ্গে যোগাযোগের কাজটিও সে করে। সংবাদ সম্মেলনে আদুলই মেলে ধরে কথার ঝাঁপি। আদুল বলে,‘ওই সময়টা ছিল অলৌকিক, যখন ডুবুরিরা আমাদের পায়!’ দুই ব্রিটিশ ডুবুরিকে দেখে আদুল বলেছিল, ‘হ্যালো।’
আদুল সাম-অন বলে, ‘যখন তাদের (ডু্বুরি) দেখি খুব অবাক হয়েছিলাম। তাঁরা ইংরেজিতে কথা বলছিল। আমিও ইংরেজিতে কথা বলি।’
সংবাদ সম্মলেনটি একটি ফুটবল মাঠের মতো করে সাজানো হয়। কিশোরদের গায়ে ছিল তাদের প্রিয় ‘ওয়াইল্ড বোরস’ ক্লাবের জার্সি। তারা কিছুক্ষণ ফুটবলও খেলে। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারটিতে বড় অক্ষরে লেখা ছিল ‘ঘরে ফিরছে ওয়াইল্ড বোরসরা’। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনু উদ্ধারকর্মীরাও।
দলটি কোচ একাপোল চান্টাওং আটকা পড়েছিলেন ওই গুহায়। তিনি উদ্ধার অভিযানে মৃত্যুবরণকারী থাই নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামান কুনানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ‘সামান কুনান আমাদের উদ্ধার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। যখন আমরা এই খবর শুনি অনেক দুঃখ পেয়েছিলাম। আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর প্রাচন প্রাতসুকান জানান, এটাই হবে ওই কিশোরদের একমাত্র আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। এরপর গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কোনো কথা হবে না।
গত ২৩ জুন ওই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় আটকা পড়ে ১২ খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ। শুষ্ক অবস্থায় সেখানে বেড়াতে গিয়ে বিপদে পড়ে যায় তারা। ভারি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যা আর কাদার কারণে গুহা থেকে আর বের হতে পারেনি। ওই ঘটনার নয়দিন পর গত ২ জুলাই আটকে পড়াদের ব্যাপারে জানতে পারে সবাই। গত ৭ জুলাই প্রথম দফায় চার কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। গত ১০ জুলাই পর্যন্ত একে একে ১৩ জনকে নিরাপদে গুহা থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।