জামায়াতকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা উচিত
বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াশিংটন টাইমস’-এ লেখা এক নিবন্ধে জয় এ আহ্বান জানান।
নিবন্ধের চুম্বক অংশ এনটিভির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
ভীতি ছড়ানো ইসলামিক স্টেট (আইএস) এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সার্বভৌম বিভিন্ন অঞ্চল দখলে নিয়েছে। আইএস ও এ ধরনের সংগঠন প্রতিনিয়ত হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে এবং এ প্রবণতা বেড়েই চলছে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রতিহত ও পরাজিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা এবং বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তারা নতুন নতুন মিত্র ও কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
মুসলমানপ্রধান বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সঙ্গে লড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গর্বিত মিত্র বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মডেল এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহসী দেশ হিসেবে দেখা হয়। এ দেশে সন্ত্রাসের প্রধান সংঘটনকারী হলো মৌলবাদী ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০টি বিস্ফোরক, ২৫টি বাঁশের মুগুর এবং জামায়াতে ইসলামীর কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া এসব বোমা ‘খুবই শক্তিশালী’ বলে দাবি করেছে পুলিশ। দেশীয় এসব বিস্ফোরক দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
নিরীহ বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো জামায়াতে ইসলামীর জন্য নতুন কিছু নয়। সংগঠনটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকে বিরোধীদলীয় নেতা, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নির্বিচারে সহিংসতা চালিয়েছে।
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে জামায়াত ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে। আর লাখ লাখ মানুষকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছে।
ধর্মনিরপেক্ষ চারজন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয়েছে। ঘনিষ্ঠ কিছু পর্যবেক্ষক শুনে বিস্মিত হয়নি যে, খুনের শিকার বেশির ভাগ ব্লগার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইসিটির রায়ের পর সারা দেশে শত শত বোমা ফাটিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
সম্প্রতি বিস্ফোরক পাওয়ার ঘটনায় ১৩ জামায়াত নেতাকে আটক করা হয়। এঁদের মধ্যে সাবেক দুই সংসদ সদস্যও (এমপি) রয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, আটক হওয়ার আগে সাবেক ওই দুই এমপি কার্যত দল চালাচ্ছিলেন। এটা সত্যি হয়ে থাকলে, দেশ যে বৈধ রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে মাথাচাড়া দেওয়া, মৌলবাদী, সন্ত্রাসী সংগঠনের কবলে পড়েছে, সে-সংক্রান্ত বাড়তি তথ্য দেয়।
জামায়াত নেতারা তাঁদের দুরভিসন্ধি থেকে সরে আসার কোনো উদ্যোগ নেননি। সংগঠন ও এর অংশীদাররা তরুণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আল-কায়েদার মতো (যেটির সঙ্গে জামায়াত হাত মিলিয়েছে) জামায়াতও যেকোনো মূল্যে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর দরকার স্থিতিশীল, সন্ত্রাসমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া। এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় রয়েছে গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার বাংলাদেশ। শক্তিশালী, উদীয়মান বাংলাদেশ তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিসর বাড়িয়েছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত বাংলাদেশ। সর্বোপরি জামায়াতে ইসলামীকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতস্তত করা উচিত নয়।