কে ছিলেন জামাল খাসোগি?
টানা দুই সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমের নজরের কেন্দ্রে আছেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি কর্মজীবনে কী করেছিলেন তা নিয়েও আগ্রহের শেষ নেই।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দাবি, ওই কনস্যুলেটে প্রবেশের পর তাঁকে হত্যা করা হয়। ১৫ সদস্যের সৌদি গোয়েন্দা দল খাসোগিকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওইদিনই তুরস্কে প্রবেশ করে বলে তুরস্ক সরকার জানায়। সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানায়, খাসোগিকে হত্যার পর তাঁর লাশ টুকরো টুকরো করা হয়।
লাদেনের সঙ্গে যোগাযোগ
সাংবাদিক জীবনে বা লেখালেখির মাধ্যমে কী এমন করেছিলেন যে তাঁকে হত্যার পর তাঁর লাশ টুকরো টুকরো করা হলো? সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ একাধিক গণমাধ্যম খাসোগির কর্মজীবন তুলে ধরা পাঠকদের সামনে।
কর্মজীবনে সৌদি আরবের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগান আক্রমণ ও ওসামা বিন লাদেনের উত্থানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেন খাসোগি।
আশি ও নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের বিখ্যাত তোরাবোরা পাহাড়ে বেশ কয়েকবার ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খাসোগি। খাসোগি একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিন লাদেনকে সহিসংতার পথ ত্যাগ করতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।
বলা হয়ে থাকে, খাসোগি রাজপরিবারের বাইরে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আলকায়েদার টুইন টাওয়ার হামলা নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারগুলো জানতেন।
টুইন টাওয়ার হামলার পর বিন লাদেনের সঙ্গে তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছিলেন খাসোগি।
সম্পাদক ও লেখক
সৌদি গেজেট, ওকাজ, আলশার্ক আলআসওয়াত ও আরব নিউজসহ বেশকিছু পত্রপত্রিকায় সাংবাদিকতা ও ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন জামাল খাসোগি।
২০০৩ সালে আল ওয়াতান নামে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব পান খাসোগি। তবে দুই মাসের মাথায় তাঁকে সম্পাদকের পদ ছাড়তে হয়।
টুইন টাওয়ার হামলা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরবের পারস্পারিক সম্পর্ক নিয়ে এবং আরব বসন্ত নিয়ে আরবি ভাষায় দুটি বই লেখেন জামাল খাসোগি। এ ছাড়া সৌদি আরবের বিদেশি শ্রমনির্ভরতা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন তিনি।
সাংবাদিকতা ছেড়ে কর্মজীবনের একপর্যায়ে তিনি সৌদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন। তবে একপর্যায়ে সৌদি রাজপরিবারের আস্থা হারান খাসোগি।
ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম
গত বছর খাসোগি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য একটি করে কলাম লিখতেন। তাতে তিনি নিয়মিত সৌদি সরকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেওয়া নীতিসমূহের বিরোধিতা করেন।
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা প্রথম কলামে খাসোগি ভিন্নমত প্রকাশের দায়ে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
‘সৌদি আরবে ইদানীংকালে শুধু সরকারের বিরোধিতা নয় একটি স্বাধীনচেতা মন থাকলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’ নিখোঁজের তিনদিন আগে বিবিসির একটি অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন খাসোগি। সাম্প্রতিক সময়ে সিএনএন, আলজাজিরাসহ সব সংবাদ চ্যানেলে সৌদি সরকারের বর্তমান নীতির কড়া সমালোচক হিসেবে হাজির হতেন তিনি।
২০১৫ সালের শুরুতে বাদশাহ হওয়ার দুই বছর পর সৌদি বাদশাহ সালমান গত বছরের জুনে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। ক্ষমতা পেয়ে একে একে রাজপরিবারের সদস্যসহ বহু উচ্চপদস্থকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন সালমান। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির সুসম্পর্ক ছিল।
মূলত সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতার সর্বশেষ পালাবদলের পর থেকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রমাগত সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন জামাল খাসোগি। প্রশ্ন উঠছে, সৌদি রাজতন্ত্রের অসীম ক্ষমতাধর এই সদস্যের বিরোধিতাই কি তবে কাল হলো সাংবাদিক খাসোগির জীবনে?
জানা যায়, ১৯৫৮ সালে মদিনায় জন্ম নেওয়া এই সাংবাদিকের দাদা বিয়ে করেছিলেন সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ আল সৌদের ব্যক্তিগত তুর্কি নারী চিকিৎসককে। সৌদি অস্ত্রব্যবসায়ী আদনান খাসোগির ভাতিজা ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। আদনান আশির দশকে চার বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে নিহত হন দোদি আল ফায়েদ। তিনি জামাল খাসোগির চাচাতো ভাই।