যেভাবে হত্যা করা হয় খাসোগিকে
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/11/01/photo-1541044956.jpg)
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে তুরস্ক সরকার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাল। তুরস্ক বলছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পরপরই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় খাসোগিকে। আর তারপরই লাশ টুকরো টুকরো করা হয়।
এক বিবৃতিতে তুর্কি সরকার জানিয়েছে, ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ভুক্তভোগী জামাল খাসোগিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি আরবের কনস্যুলেটে প্রবেশের পরপরই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর মরদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে তা নষ্ট করে ফেলা হয়।’
তবে এই দাবির পক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেনি তুর্কি সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট এই সৌদি সাংবাদিক সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি শাসকদের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমগুলোতেও নিয়মিত সৌদি সরকারের, বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেওয়া নীতির সমালোচনা করে আসছিলেন।
তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একমত যে, খাগোসিকে সৌদি কনস্যুলেটেই হত্যা করা হয়েছে, তবে তাঁর লাশের কোনো হদিস মেলেনি এবং তিনি ঠিক কীভাবে নিহত হয়েছেন, তারও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
এর আগে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান কয়েকবার তাঁর বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া তুরস্কের দুটি সংবাদপত্র এবং আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদমাধ্যম গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাতে হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু তথ্য জানায়।
এ সপ্তাহে সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল-মুজেব ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট পরিদর্শন করেন এবং এ সফরে তুরস্কের প্রধান রাষ্ট্রীয় আইনজীবী ইরফান ফিদানের সঙ্গে দুবার সাক্ষাৎ করেন। ইরফান ফিদান অবশ্য জানিয়েছেন, সাক্ষাতে সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো তথ্যই দেননি।
সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেলকে তুর্কি সরকার মূলত তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। তা হচ্ছে, খাসোগির মরদেহ কোথায়, হত্যা পরিকল্পনার বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য তাদের কাছে রয়েছে কি না এবং স্থানীয় ব্যক্তিটি কে?
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এর আগে একজন সৌদি কর্মকর্তা জানান, খাসোগির লাশ মাদুরে জড়িয়ে ‘স্থানীয় এক ব্যক্তির’ হাতে দেওয়া হয়েছে, ওই ব্যক্তি তাঁর দাফন সম্পন্ন করেছেন। তুর্কি সরকার ওই স্থানীয় ব্যক্তির পরিচয় জানতে চেয়েছে।
গতকাল বুধবার এক লিখিত জবাবে সৌদি আরব তুরস্ককে জানায়, একমাত্র যৌথ তদন্তের মাধ্যমেই সব প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। তারা এও বলেছে, স্থানীয় ব্যক্তির বিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
তবে তুরস্ক সৌদি সরকারকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের দায়ী করে আনুষ্ঠানিক কিছু কখনোই বলেনি। তবে বুধবার ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, উচ্চপদস্থ কারো হুকুম ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়নি।
সৌদি আরব শুরু থেকে রাজপরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নাকচ করে আসছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত সপ্তাহে সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে তদন্তে উভয় পক্ষ সহযোগিতা করবে বলে একমত হন।
অজ্ঞাত তুর্কি কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে এর আগে বলেছেন, সাংবাদিক খাসোগির হত্যার অডিও ও ভিজ্যুয়াল প্রমাণ রয়েছে বলে জানালেও এখন পর্যন্ত সেগুলো প্রকাশ করেননি।
তুরস্কের গণমাধ্যমে নানা সূত্রের বরাতে হত্যার বর্ণনা উঠে এসেছে। এবং এও বলা হয়েছে, তাঁকে হত্যার আগে নির্যাতন করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে তাঁর বাগদত্তা তুর্কি নারী হেতিজে জেঙ্গিস স্থানীয় একটি টেলিভিশনে আবেগময় সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, তিনি যদি জানতেন সৌদি আরব তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে, তবে তিনি কখনোই তাঁকে সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকতে দিতেন না।
সাংবাদিক জামাল খাসোগি বিবাহ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে যান। কনস্যুলেটে ঢোকার পর তাঁর খোঁজ মেলেনি। কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষমাণ হেতিজে জেঙ্গিস ১১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান।