ছয় বছরের শিশু, নয় বছরের ধর্ষক!
ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নয় বছরের আরেক শিশুকে। ভারতের উত্তরপ্রদেশে এই চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাটি ঘটেছে। রাজ্য পুলিশ বলছে, ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নয় বছরের এই শিশুটি সর্বকনিষ্ঠ।
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের পিলিভিট জেলার মাইথিতে গতকাল শুক্রবার নির্যাতনের শিকার শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে। এর ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিশুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তাকে বেরিলির একটি কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নির্যাতিত শিশুটি জাতভ সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড শিডিউলড ট্রাইব অ্যাক্ট, ১৯৮৯-এর ধারায় মামলা করা হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের সার্কেল অফিসার ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নির্মল টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত ছেলেটিকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করি। তিনি ছেলেটিকে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ছেলেটি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছে। এ ছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষায় মেয়েটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ছেলেশিশুটির বয়স এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে তা ১০ বছরের বেশি হবে না।’
গত বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে। সে সময় শিশু দুটি মাঠে খেলা করছিল। মেয়েশিশুটির ভাই টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলে, ‘আমার বোনের বয়স আনুমানিক ছয় বছর। সে চকলেট কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এমন সময় ওই ছেলেটি তাকে তার সঙ্গে খেলা করতে ডাকে। সে তাকে বাড়ির কাছের মাঠে নিয়ে যায় এবং সেখানেই ধর্ষণ করে। কিছু সময় পরে যখন আমার বোন বাড়িতে ফিরে আসে তখন ব্যথা ও রক্তক্ষরণের কারণে সে কাঁদছিল। পরে সে পুরো ঘটনা আমাদের কাছে বর্ণনা করে।’
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি জানাজানি হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পালিয়ে যায় ছেলেটি। পরে শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ছেলেটিকে খুব ভীত দেখাচ্ছিল। ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে সে পুলিশকে বলে, ‘খেলতে খেলতে হয়ে গেছে।’
নেউরিয়া থানার স্টেশন অফিসার দালবির ভার্মা বলেন, ‘এটা খুবই অবিশ্বাস্য ঘটনা। যখন নয় বছরের একটি শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়, তখন তা আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু সে নিজে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে।’
এদিকে প্রথমে পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত শিশুটির বাবা-মা। পরে জাতভ সম্প্রদায়ের লোকজন এসে থানার সামনে বিক্ষোভ করার পর তারা এফআইআরটি গ্রহণ করে। তবে পুলিশ বলছে, অভিযোগটি অবিশ্বাস্য মনে হওয়ায় এফআইআর নিতে দেরি করা হচ্ছিল। তবে যখন বিষয়টি শিডিউলড কাস্ট অ্যান্ড শিডিউলড ট্রাইব অ্যাক্ট-এর ধারায় পড়ে যায়, তখন অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ভারতে এখন আশঙ্কাজনক হারে অপ্রাপ্তবয়স্কদের ঘটানো অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। উন্মুক্ত ইন্টারনেট, টেলিভিশন, সিনেমা ও পর্নোছবির কারণে শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার প্রধান মধু গার্গ বলেন, ‘শিশুদের কাউন্সেলিং করা ও তাদের সঠিক যৌনশিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। এই ধরনের অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিযুক্ত শিশুটি এক কামরাবিশিষ্ট বাড়িতে বাস করে। এবং সময়ের আগেই যৌনতা বিষয়টি তাদের কাছে উন্মুক্ত হয়। যথাযথ তত্ত্বাবধান না পাওয়ার কারণে তাদের ভেতরে এক ধরনের যৌনাকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে। আর এই আকাঙ্ক্ষাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধর্ষণে প্ররোচিত করে।’