সঙ্গিনীকে দেখতে প্রতিবছর ৮ হাজার মাইল পথ পাড়ি!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/08/28/photo-1566970115.jpg)
দূরত্ব সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়, প্রমাণ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পুরুষ সারস। ক্লেপেটান নামের পাখিটির সঙ্গিনীর নাম ম্যালেনা। সে থাকে ক্রোয়েশিয়ায়। প্রতিবছর নিয়ম করে প্রেয়সীর সঙ্গে সময় কাটাতে আট হাজার মাইলের বেশি পথ উড়ে যায় ক্লেপেটান। ১৬ বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছে পাখিটি! মার্কিন অনলাইন ম্যাগাজিন মেন্টাল ফ্লসের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, শিকারির গুলিতে আহত হয়ে একটি পুকুরে পড়ে যায় ম্যালেনা। সেখান থেকে সারসটিকে উদ্ধার করেন স্টিফেন ভোকিচ নামের এক ক্রোয়েশীয় নাগরিক। আহত সারটিকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন।
ভোকিচ বলেন, ‘যদি ওকে পুকুর থেকে না তুলে আনতাম, তাহলে শিয়ালে খেত। যেহেতু ওর ভাগ্য আমিই বদলে দিয়েছি, তাই ওর জীবনের দায়িত্বও আমার।’
তাই সারসটিকে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করতে থাকেন ভোকিচ। সে সময় তিনি টের পান, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাখিটির সঙ্গে দেখা করতে আসে তার প্রেমিক। সারস ঠোঁট দিয়ে ঠুক ঠুক শব্দ করে বলে ভোকিচ ম্যালেনার প্রেমিকের নাম দেন ‘ক্লেপেটান’। এমনিতে সারস সাধারণত এত দীর্ঘ সময় ধরে এক সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে থাকে না। তাই ক্লেপেটান-ম্যালেনা জুটিকে এদিক থেকে অনন্য বলা যায়। এই সারস জুটির বার্ষিক মিলনক্ষণের জন্য প্রতিবছর বিশেষ আয়োজন রাখেন ভোকিচ। ক্লেপেটানের আসার সময় হয়ে এলে তাকে স্বাগত জানাতে মাছভর্তি বালতি প্রস্তুত করে রাখেন ভোকিচ।
ম্যালেনার সঙ্গে সময় কাটানোর পর বছরের বাকি সময়টা ক্লেপেটান কোথায় থাকে, তা জানতে পাখিটির শরীরের বেঁধে দেওয়া হয়েছে একটি ট্র্যাকিং রিং। যা থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কাছাকাছি কোথাও ক্লেপেটানের বাসা। প্রতিবছর সঙ্গিনীর দেখা পেতে প্রায় এক মাস আট হাজার মাইলের বেশি পথ পাড়ি দেয় ক্লেপেটান।
তবে এই লাভবার্ডদের প্রেমকাহিনী আর কত দিন দীর্ঘায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে ম্যালেনার সঙ্গে যে সারস পাখিটি দেখা করেছে, সেটি নাকি ক্লেপেটান নয়, অন্য কেউ। ক্লেপেটান-ম্যালেনা জুটির জন্য একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছে ভোকিচের ছেলে ডারিও। ক্লোজড ওই গ্রুপে ডারিও লিখেছে, ‘আসল ক্লেপেটান বোধ হয় আসেনি। এবার যে সারসটি এসেছে, সে কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছে। পাখিটি কেবল খাবার খেতে এসেছিল। দুদিন থেকে চলে গেছে।’ অথচ ক্লেপেটান যখন ম্যালেনার সঙ্গে দেখা করতে আসত, তখন তারা কখনোই একে অন্যকে কাছ ছাড়া করত না।
এখন পর্যন্ত এ বছর ক্লেপেটানের ক্রোয়েশিয়া আসার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হয়তো বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে সে।
সংবাদমাধ্যম ক্রোয়েশিয়া টাইমসকে ভোকিচ বলেন, ‘এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ক্লেপেটান তার কাজ করে গেছে। গত বছর যখন এসেছিল, খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাকে।’