হত্যার আগে খুনিদের যা বলেছিলেন জামাল খাসোগি
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগের মুহূর্তে কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বয়ান প্রকাশ করেছে তুরস্কের একটি সংবাদপত্র। খাসোগিকে হত্যার সময় ধারন করা একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে বয়ানটি লিখিত আকারে প্রকাশ করেছে তুরস্কের সরকার-সমর্থক পত্রিকাটি।
সৌদি আরব সরকারের সমালোচক জামাল খাসোগিকে গত বছরের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তুরস্কের সরকারপন্থি পত্রিকা সাবাহ জানিয়েছে, সৌদি দূতাবাসের ভেতরের একটি রেকর্ডিং তুর্কি গোয়েন্দাদের হাতে আসে। ওই রেকর্ডিংয়ে মৃত্যুর আগে জামাল খাসোগির শেষ কথাসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিভিন্ন তথ্য রয়েছে বলে পত্রিকাটির দাবি।
খুন হওয়ার আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি কলাম লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সাংবাদিক খাসোগি।
জামাল খাসোগিকে সর্বশেষ জীবিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর। সেদিন নিজের তুর্কি বাগদত্তাকে বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করতে সৌদি দূতাবাসে যান খাসোগি।
খাসোগি রহস্যজনক মৃত্যুর পর চাপের মুখে পড়া সৌদি আরব এ বিষয়ে নানান পরস্পরবিরোধী তথ্য প্রকাশ করে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে একটি অসাধু চক্রকে দায়ী করে এবং ১১ ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করে।
পত্রিকাতে কী বলা হয়েছে?
সাবাহ পত্রিকা সাংবাদিক খাসোগির রহস্যজনক হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে বরাবরই সরব। তবে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত কিছু তথ্য নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।
চলতি সপ্তাহে খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল সাবাহ। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ‘হিট স্কোয়াড’ খাসোগিকে হত্যা করেছে। আর পত্রিকাটির নতুন প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগমুহূর্তের একটি কথিত রেকর্ডিংয়ের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব তথ্য থেকে জানা গেছে, হত্যার ঘটনাস্থলে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন সৌদি আরব থেকে আসা ‘হিট স্কোয়াড’এর একজন সদস্য। খাসোগি সৌদি দূতাবাসে পৌঁছার আগে তাঁকে ‘উৎসর্গ করা পশু’ হিসেবে উল্লেখ করেন ওই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।
সাবাহর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি দূতাবাসে ঢোকার পর একটা সময় সন্দেহজনক কিছুর আভাস পান খাসোগি। ওই সময় ‘হিট স্কোয়াড’ এর পক্ষ থেকে খাসোগিকে বলা হয়, ইন্টারপোলের আদেশে তাঁকে রিয়াদে ফিরে যেতে হবে।
সাবাহ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হিট স্কোয়াড’ এর অনুরোধ মানতে রাজি হননি খাসোগি। সন্দেহজনক কিছু ঘটার আঁচ পেয়ে নিজের ছেলেকে ম্যাসেজ পাঠান তিনি। এরপরই খাসোগিকে চেতনানাশক ওষুধ দেয় ‘হিট স্কোয়াড’।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অচেতন হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে খাসোগি তাঁর হত্যাকারীদের অনুরোধ করে বলেছিলেন, তাঁর অ্যাজমা আছে, তাই তাঁর মুখ যেন না বাঁধা হয়।
সাবাহ পত্রিকার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রেকর্ডিংয়ে ধস্তাধস্তির শব্দ থেকে অনুমান করা হচ্ছে, মুখে বায়ুনিরোধক ব্যাগ বেঁধে শ্বাসরোধ করে খাসোগিকে হত্যা করে দুস্কৃতকারীরা।
এ ছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ খাসোগির হাত-পা কাটেন বলে রেকর্ডিং থেকে বোঝা যাচ্ছে বলে সাবাহর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। খাসোগি হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ডিংয়ের অস্তিত্ব নিয়ে এক বছর ধরেই গুঞ্জন চলছে। সাবাহর প্রতিবেদন সত্যি হলে সে গুঞ্জন বাস্তব বলে প্রমাণিত হবে।
যদিও তুর্কি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অডিওর অস্তিত্বের কথা আগেই জানিয়েছিলেন। এমনকি এসব অডিও বিভিন্ন দেশের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও তুরস্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু এসব অডিও রেকর্ডিং সাবাহ পত্রিকার কাছে কীভাবে গেল তা স্পষ্ট নয়।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় এক বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও খাসোগির মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘের বিচারবহির্ভূত হত্যাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাগনেস ক্যালামার্ড খাসোগি হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এই শীর্ষ কর্মকর্তা খাসোগির মৃত্যুকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের’ জন্য সৌদি আরবকে দায়ী করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
তবে সৌদি আরব সরকার অ্যাগনেস ক্যালামার্ডের অভিযোগকে অসত্য দাবি করে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনে সৌদি কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।