সন্ত্রাসী হামলায় প্যারিসে ‘রক্তবন্যা’, ১৫৩ প্রাণহানি
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে ছয়টি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ১৫৩ জন লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক।
ফ্রান্সের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতের এ হামলার ঘটনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার ফ্রান্সজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সব সীমান্তও।
ফ্রান্সের দাবি, ন্যক্কারজনক ওই হামলার পর নিহত হয়েছে ৮ হামলাকারী। তাদের মধ্যে আত্মঘাতী বোমায় নিহত হয়েছে সাতজন।
কোন হামলায় কতজন নিহত
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্যারিসে বিদ্রূপ সাময়িকী শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলায় ১৮ জন নিহত হওয়ার পর আবার সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠল ফ্রান্স। শুক্রবারের এ হামলায় শহরের মাঝামাঝি বাটাক্লাঁন কনসার্ট হলেই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। হামলাকারীরা সেখানে শতাধিক মানুষকে আটক করার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিম্মি সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটায়।
অন্য হামলাগুলো হয়েছে স্টেড দ্য ফ্রান্স এবং কয়েকটি বার ও রেস্তোরাঁয়। এসব হামলায় মারা যায় আরো অর্ধশত মানুষ।
সিরিজ হামলাগুলোর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের ঘটনাটি আত্মঘাতী বোমা হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই স্টেডিয়ামে তখন জার্মানি বনাম ফ্রান্স ফুটবল ম্যাচ চলছিল। ওই খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদঁ ।
বোমা হামলার পর প্যারিসের বাসিন্দাদের যার যার বাড়িতে অবস্থান করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শহরে নামানো হয়েছে দেড় হাজার বাড়তি সেনা সদস্যকে। হামলার তদন্তে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ফ্রান্সের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ভাষ্য
হামলার পর টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, বর্বর এমন হামলা আর কেউ করতে সাহস যেন না পায়। যারা এমন কাজ করেছে, তারা যেন দেশ ছাড়তে না পারে, সেজন্য জরুরি অবস্থা জারি এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
প্যারিসে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিশ্ব নেতারা।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো। আর ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ‘নিরপরাধ বেসামরিক জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার আরেকটি ভয়ঙ্কর চেষ্টা আমরা দেখলাম।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটবার্তায় বলেছেন, তাঁরা ফ্রান্সের মানুষের পাশে আছেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ বলেছেন, হামলায় হতাহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া সরকার ফ্রান্সের জনগণ, সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাশে থাকবে।