এক মুসলিম পরিবার বাঁচিয়ে রেখেছে ৩০০ বছরের ঐতিহ্য
‘রোগান’ শিল্পের বয়স প্রায় ৩০০ বছর। আর গোটা ভারতে এই পুরনো শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে একটি মাত্র মুসলিম পরিবার।
মূলত, অসামান্য চিত্রকর্ম এই ‘রোগান’ শিল্প। ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে রং মিশিয়ে তাতে কলম বা ধাতব কাঠি চুবিয়ে পোশাক এবং অন্যান্য সামগ্রীর ওপর ফুটিয়ে তোলা হয় অত্যন্ত সূক্ষ এই চিত্রকর্ম। যা দেখতে হয় দারুণ সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
ভারতের গুজরাট রাজ্যের কচ্ছ জেলার নিরোনা গ্রাম। এই গ্রামেই বসবাস করেন খাত্রি পরিবার। জানা যায়, এই পরিবারের এক সদস্য গফফুরভাই খাত্রি তাঁর পূর্ব পুরুষদের কাছে থেকে শিখেছিলেন এই ‘রোগান’ শিল্প। যে ঐতিহ্যের ধারা আজও বহন করে চলেছেন ওই পরিবারের সুমার ও জব্বার খাত্রির মতো সদস্যরা। ধারণা করা হয়, বহু বছর আগে পারস্য থেকে এই শিল্প শিখে এসেছিলেন খাত্রি পরিবারের কোনো এক সদস্য।
ভারতের অতি প্রাচীন এই শিল্পকর্ম নিয়ে সম্প্রতি পসরা বসেছে কলকাতার বিধাননগরের সেন্ট্রাল পার্কের কারিগরহাটে। সেখানে বসে কাপড়ের ওপর ‘রোগান’ শিল্পের কারুকাজ করতে করতে খাত্রি পরিবারের সদস্য জব্বার খাত্রি জানালেন, সারা দেশের মধ্যে শুধু তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই এই চিত্রকর্ম করতে পারেন। প্রথমে ক্যাস্টর অয়েল গরম করে আঠার মতো অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। তারপর, তার সঙ্গে গুঁড়ো রং মিশিয়ে একটি পাত্রে রেখে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে ৬ ইঞ্চি লম্বা ধাতব কাঠি বা পেন দিয়ে সেই রং কাপড়ের ওপর লাগিয়ে নানা রকমের নকশা করা হয়। শুধু পোশাকই নয়, বিছানার চাদর, টেবিল ক্লথ, বালিশের কভার এমনকি ফাইল ও ফোল্ডারের উপরও এই নকশা করা হয়।
নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ‘রোগান’ শিল্পের সামগ্রী বারাক ওবামার জন্য উপহার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
অভিনব এই শিল্পের জন্য খাত্রি পরিবার পেয়েছে জাতীয় পুরস্কারও।
শুধু দেশের মাটিতেও নয়, বিদেশের মাটিতেও এই ‘রোগান’ শিল্পের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। জব্বার খাত্রি জানান, দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র তাঁদের পরিবারই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে তাঁর ইচ্ছে, এই শিল্প যাতে আরো মানুষ শিখতে পারে সে কারণে এই ‘রোগান’ শিল্পের ওপর একটি স্কুল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।