সাইবেরিয়ার ‘ভূত-বালিকা’
গম্ভীর মুখের এক কিশোরী। বেশভূষায় বেশ সম্পদশালী পরিবারের একজন বলেই মনে হয়। শত বছর আগে সাইবেরিয়া অঞ্চলে তোলা কিছু ছবিতে দেখা যায় এই রহস্যময় কিশোরীকে। কিন্তু পরিচয় জানতে গিয়েই দেখা যায় মূল বিপত্তি। কোনো কূল-কিনারাই পাওয়া যায় না ওই কিশোরীর। সাইবেরিয়ার এই ‘ভূত-বালিকার’ পরিচয় জানতে শুরু হয়েছে অনুসন্ধান।
ডেইলি মেইল জানায়, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে রাশিয়ার শেষ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাসের সময় সাইবেরিয়া ও মধ্য রাশিয়ার ক্রাসনোইয়ারস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি পাওয়া যায়। এসব ছবির বেশ কয়েকটি পোস্টকার্ড বা পোস্টার হিসেব ব্যবহার হয়। ছবিগুলোর প্রায় সব কটিতেই সুশ্রী পোশাকে রহস্যময় এক কিশোরীকে দেখা যায়। কোনো কোনো ছবিতে খুব ছোট করে হলেও তার উপস্থিতি ছিল।
রহস্যময় সাইবেরিয়ার কিশোরীর খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে স্থানীয় ক্রাসনোইয়ারস্ক জাদুঘর। হলুদ হয়ে যাওয়া পুরাতন সব ছবি থেকে ওই কিশোরীকে আলাদা করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবি তোলার সময় ওই কিশোরীর বয়স ছিল ৮ থেকে ১০ বছর।
গবেষকরা দেখতে পান, সব ছবিতেই রহস্যময় কিশোরীর পরনে ছিল পরিপাটি পোশাক। হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে থাকা হালকা রঙের ফ্রক পরে ছিল ওই কিশোরী। মাথায় ছিল লম্বা বেণি এবং বেণির শীর্ষে ছিল কালো রাবার ব্যান্ড। অনেক ছবিতেই কিশোরীর হাতে ছাতা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ছবির ফোকাসেই ছিল ওই কিশোরী। তবে ওই কিশোরীকে কখনোই হাসতে দেখা যায়নি।
একটি ছবিতে কিশোরীকে ক্রাসনোইয়ারস্ক রেলসেতুর কাছে একটি ছাদের ওপর দেখা যায়। ওই রেলপথের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৯৯ সালে। আরেক ছবিতে তাকে দেখা যায় স্থানীয় চার্চের সামনে কিছু কিশোরের সঙ্গে। এমন বেশ কয়েকটি ছবিতে প্রায় একই ভঙ্গিমায় তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়দের মতে, ছবিগুলো তোলা হয়েছিল ১৯০৬ থেকে ১৯০৮ এই সময়ে। আর ছবিগুলো তুলতে অন্তত কয়েকদিন সময় লেগেছিল।
গবেষকরা ধারণা করেন, স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী ও ধনী পরিবারের সদস্য ছিল ওই কিশোরী। হয়তো ওই পরিবার কম্যুনিস্ট স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল। গবেষকদের মতে, ওই কিশোরীর ছবিসহ কিছু পোস্টার সারা ক্রাসনোইয়ারস্ক এলাকায়ই শোভা পায়। তবে কেউই কিশোরীর পরিচয় জানে না। বিষয়টি বেশ অস্বাভাবিক। এমনও হতে পারে, হয়তো বলশেভিক আন্দোলনের আগেই পরিবারসহ কিশোরীটি ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো দেশে চলে গিয়েছিল। কিছু গবেষকের মতে, ওই কিশোরী ছিল ফটোগ্রাফারেরই মেয়ে বা ভাতিজি। তবে এর দাবির পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।
গবেষকরা বলেন, রহস্যময় কিশোরীকে ক্রাসনোইয়ারস্ক এলাকার ছবি বলা চলে। তার আসল পরিচয় জানতে এখনো বিস্তর পর্যবেক্ষণ চলছে।