দ্রুতগতির দানিউব স্যামন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/03/24/photo-1427189672.jpg)
এটি খুবই দ্রুতগতির, ছিপছিপে, অভিজাত এবং খুবই সুন্দর—এ কথাগুলো শুনলে হয়তো মনে হবে, কোনো রেসিং কারের বর্ণনা দিচ্ছেন কেউ। কিন্তু না, পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারওয়াচের পরিচালক উলরিখ আইশেলমান এভাবেই একটি মাছের বর্ণনা দিয়েছেন। ল্যাটিনে একে বলা হয় হুচো হুচো, জার্মানে হুচেন এবং ইংরেজিতে এটি দানিউব স্যামন নামে পরিচিত। কারণ, একসময় দানিউব অববাহিকাজুড়ে এই মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।
বিবিসি জানিয়েছে, দানিউব স্যামন আকারে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সমান হতে পারে এবং ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে বলকান অঞ্চলে এই মাছের শেষ আবাসস্থল এখন বাঁধ নির্মাণের কারণে হুমকির মুখে। স্লোভেনিয়া ও মন্টেনেগ্রোর উপত্যকার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নদী এবং জলপ্রবাহের মাঝেই বসবাস করে দানিউবের এই দানবরা।
‘আমরা ইউরোপিয়ানরা এশিয়ার বনের শেষ বাঘগুলোর দুর্দশা নিয়ে অনেক কথা বলি এবং তাদের রক্ষার দাবি জানাই। কিন্তু শেষ বাঘগুলোর ওপর হুমকির ব্যাপারে আমরা অন্ধের মতো আচরণ করি—দানিউব স্যামনই আমাদের সেই বাঘ।’ স্লোভেনিয়ার সাভা নদীর পাড় দিয়ে জলাভূমির বনে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন আইশেলমান। তাঁর সামনে এক ব্যক্তি সাদা রঙের একটি বালতি দিয়ে নদীর উপরিভাগে জমে থাকা তুষার খুব সাবধানে সরাচ্ছিলেন। শীতনিদ্রা থেকে মাত্র নদীটি জেগে উঠছে। বালতির ভেতর পাঁচটি তিন বছর বয়সী নীল-সবুজ-ধূসর-সাদা-রুপালি মাছ। প্রতিটি প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা, ছোট জায়গার ভেতর এঁকেবেঁকে চলাচল করছে, যেন প্রকৃতিতে মুক্তির আভাস পেয়ে নাচছে কিছু কিশোর-কিশোরী।
অস্ট্রিয়ায় বসবাসরত মার্কিন বিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েইস বলেন, ‘এই মাছ আমাদের নদীগুলোর স্বাস্থ্যের একটি ভালো নির্দেশক। সম্প্রতি ওয়েইসসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে সতর্ক করে বলা হয়েছে, নতুন বাঁধ নির্মাণের ফলে অনেক মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। মানুষের জীবনধারণের জন্যই মাছগুলোর বংশবিস্তারে প্রয়োজন প্রচুর জায়গা, দ্রুত বহমান পরিষ্কার পানি এবং নির্দিষ্ট আবাসস্থল।’
স্লোভেনিয়া মৎস্যশিকারি সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে পরিবেশবিদরা এখন দানিউব স্যামনকে রক্ষা করার জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কৃত্রিমভাবে প্রজনন করে তাঁরা দানিউব স্যামন ছেড়ে দিচ্ছেন বলকান অঞ্চলের নদীগুলোতে।
প্রাকৃতিক পরিবেশে স্যামন কীভাবে প্রজনন করে, তা ব্যাখ্যা করছিলেন ওয়েইস। নদীর তলদেশে পছন্দসই একটি জায়গা বেছে নেয় স্যামন রানি, আর তার পাশে খুব যত্নের সঙ্গে অবস্থান নেয় রাজা স্যামন। তার পর তারা দুজন মিলে একটি নৃত্য করতে থাকে, আর সেই নৃত্যের তোড়ে নুড়িপাথর সরে কিছুটা জায়গা তৈরি হয় ডিমপাড়ার জন্য। এরপরই রাজা স্যামন তার বীজ ছড়িয়ে দেয় পানির তলদেশে একটি মেঘের আকারে।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হলে রানি স্যামনটি তার লেজ দিয়ে বালুর একটি আস্তর তৈরি করে ডিমের ওপরে। আর প্রায় এক মাস পর জন্ম হয় নতুন মাছের, বলকানের রাজপুত্র ও রাজকন্যাদের।