এক ঘণ্টা আঁধারে ডুবল পৃথিবী
হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল ফ্রান্সের প্যারিসের গৌরব আইফেল টাওয়ারের বাতিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের এম্পায়ার স্টেট ভবনের বাতিগুলোও নিভু নিভু...। কী ভাবছেন? ইউরোপ-আমেরিকাতেও তবে বিদ্যুৎবিভ্রাট শুরু হয়ে গেল!
প্রকৃতির জন্য বৈশ্বিক তহবিলের (ডব্লিউডব্লিউএফ) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অবশ্য জানাচ্ছে ভিন্ন কথা। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি ‘ধরিত্রী ক্ষণের’ অংশ হিসেবে গত শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে কয়েক মিলিয়ন মানুষ এক ঘণ্টা বিজলিবাতি বর্জনের এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেছে। এ বছরের ‘ধরিত্রী ক্ষণের’ মূল স্লোগান ছিল ‘নিজের শক্তিকে ব্যবহার করে পৃথিবীকে রক্ষা করো।’
উজ্জ্বল বাতির মহিমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরকে আলোকিত করা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংসহ বিখ্যাত ব্রডওয়ের নিয়ন বাতিগুলোর উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওই সন্ধ্যায়। লাস ভেগাসের স্ট্রিপ ক্লাব, সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজসহ দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেও এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, পেরু, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোসহ বিভিন্ন শহরও ডুবেছিল আঁধারে। উদ্যোগের সাথে ছিল ফ্রান্সও। প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের বাতি বন্ধ ছিল পাঁচ মিনিট। কর্মকর্তারা জানান, নিরাপত্তার জন্য পুরো এক ঘণ্টা বাতি বন্ধ করে রাখা সম্ভব হয়নি। যদিও এ শহরের ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য ৩০০ স্থাপনার বাতি বন্ধ রাখা হয় পুরো ঘণ্টাজুড়ে।
ইউরোপে প্যারিস ছাড়াও ফ্রান্সের অন্যান্য শহর এবং ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড ও জার্মানির শহরগুলোতে পালিত হয়েছে একই কর্মসূচি। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ‘ধরিত্রী ক্ষণ’ উপলক্ষে একটি গানের অনুষ্ঠান হয়। অন্যান্য শহরেও ছিল বিভিন্ন উদ্যোগ।
এশিয়ায় চীন, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, ভারতসহ অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনের বাতিগুলো এক ঘণ্টার জন্য নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ধরিত্রী ক্ষণ কর্মসূচির প্রধান সুধাংশু সারণওয়ালা এএফপিকে জানান, বিশ্বব্যাপী ১৭০টি দেশে এক হাজার ২০০-এর বেশি স্থাপত্যে বিজলিবাতি বর্জনের এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ইউনেসকোর ৪০টি বিশ্ব ঐতিহ্যও বাদ পড়েনি।
দিনটি উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানও পালিত হয়। যেমন ফিলিপাইনে ঐতিহ্যবাহী জুম্বা পার্টি, ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মোমের আলোয় রাতের খাবার খাওয়ার উৎসব আর লন্ডনের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় মোমের আলোতে ভোজের আয়োজন।
২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রথমবারের মতো ‘ধরিত্রী ক্ষণ’ কর্মসূচিটি পালিত হয়। মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীকে বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার অনুরোধ জানানো হয় সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেই থেকে ফি বছর ২৮ মার্চ ‘ধরিত্রী ক্ষণ’ পালন করা হয়।