ভোটের ফলের পর পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস

বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী তৃণমূল কংগ্রেস ও পরাজিত সিপিএম-কংগ্রেস জোট পার্টি অফিস দখল, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। হামলার কারণে আতঙ্কে রয়েছে রাজ্যটির অনেক এলাকার বাসিন্দারা।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল পেয়েছে ২১১টি আসন। বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৭৬টি আসন (যার মধ্যে বামফ্রন্ট ৩২ ও কংগ্রেস ৪৪), বিজেপি তিনটি আসন ও অন্যরা পেয়েছে চারটি আসন। ভোটের ফলাফলে এই ব্যাপক জয় পাওয়ার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
পরাজিত সিপিএম-কংগ্রেস জোটের নেতাদের অভিযোগ, তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর রাজনৈতিকভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলাসহ কলকাতার বিভিন্ন স্থানে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা সিপিএমের পার্টি অফিস দখল, ভোটের সময় বাম-কংগ্রেস জোটের হয়ে কাজ করার অভিযোগে বাম-কংগ্রেস কর্মীদের মারধর, তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর করাসহ পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এমনকি অনেক স্থানে সিপিএম-তৃণমূল সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে বলেও জানা গেছে।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, যেখানে যেখানে জোটপ্রার্থীরা জয়ী হয়েছে সেখানে সেখানে বিনা প্ররোচনায় তৃণমূল কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।
যদিও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরেই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে চলতে হবে। কোথাও যেন কোনো ধরনের অশান্তির ঘটনা না ঘটে। কিন্তু নেত্রীর সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে যে সব এলাকায় তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন সেই এলাকাগুলোতে সহিংসতার মাত্রা বেশি। উত্তর দমদম কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য হেরে যাওয়ার পর স্থানীয় নিউ ব্যারাকপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করাসহ থানায় ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পাশাপাশি অনেক জায়গায় বিরোধীরা শাসক দলের তাণ্ডবে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট মিটলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ও র্যাফ নামিয়ে অনেক স্থানে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। গতকাল সন্ধ্যায় শুরু করে দফায় দফায় এই সন্ত্রাস রাজ্যটির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধীরা অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী এই সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল পশ্চিমবঙ্গে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠনের দাবি নিয়ে আজ শুক্রবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশর নাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিট নাগাদ তিনি দলীয় নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজভবনে যান। সেখানে গিয়ে প্রায় আধঘণ্টার মতো বৈঠক করে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
জানা গেছে, আগামী ২৭ মে কলকাতার রেড রোডে শপথ অনুষ্ঠান নিয়েও রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। এদিন দ্বিতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেছা জানান রাজ্যপাল।
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০ মে প্রথম পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম। তাই এদিন ফের সরকার গঠনের দাবি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।’