অভ্যুত্থান নিয়ে দোষারোপ করায় তুরস্ককে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র
তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশের অভ্যুত্থানচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করা হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে শনিবার অভিযোগ করেছিলেন দেশটির শ্রমমন্ত্রী সুলাইমান সয়লু।
তুরস্কের শ্রমমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সময় রোববার জন কেরি বলেন, তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র আছে বলে ইঙ্গিত করলে তা হবে ডাঁহা মিথ্যা এবং তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।
এর আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী ব্যক্তি সামরিক বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা নন; বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বসবাসরত তুরস্কের ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেন।
ফেতুল্লা গুলেনকে উদ্দেশ করে গতকাল শনিবার এরদোয়ান বলেন, ‘পেনসিলভানিয়ার জন্য আমার বার্তা, এই জাতির বিরুদ্ধে আপনি যথেষ্ট ষড়যন্ত্রে জড়িয়েছেন। সাহস থাকলে দেশে ফিরে আসুন।’
তবে সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে হাত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন ফেতুল্লা গুলেন। তিনি বলেন, যিনি গত পাঁচ দশক ধরে বহুমুখী সামরিক অভ্যুত্থানের নিপীড়ন সয়েছেন, তাঁর ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রচেষ্টার পেছনে থাকার অভিযোগ অপমানজনক।’
গতকাল শনিবার সকালেই অভ্যুত্থানে যুক্ত থাকার অভিযোগ নাকচ করেছেন ফেতুল্লা গুলেন। অভ্যুত্থানে কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি তাঁর।
শুক্রবার অভ্যুত্থানচেষ্টার পর ফেতুল্লা গুলেনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন এরদোয়ান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, গুলেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে হবে।
এরদোয়ান ও গুলেন ভালো বন্ধু ছিলেন। দুজনই ছিলেন সহনশীল ইসলামপন্থী। নিজের সমর্থকদের এরদোয়ানের পক্ষে কাজ করান গুলেন। আবার গুলেনের জন্যও কাজ করেন এরদোয়ান। বিশ্বজুড়ে ইসলামিক স্কুল চালান গুলেন, যার মধ্যে শতাধিক স্কুলই যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ২০১৩ সালে তাঁদের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। এরদোয়ান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। এরদোয়ানের বিশ্বাস, বিচার বিভাগে থাকা গুলানের মিত্ররা এর জন্য দায়ী। বিচার বিভাগে গুলেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত অনেককে পদচ্যুত করা হয়। ৭০ বছর বয়সী গুলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া থেকেই তাঁর কার্যক্রম চালান। বিশ্বজুড়ে ১০ থেকে ৮০ লাখ অনুসারী গুলেনের।
অভ্যুত্থানের আগে থেকেই অবশ্য তুরস্কে বিভিন্ন আইনি জটিলতায় জড়ানো হয়েছে ফেতুল্লা গুলেনকে।
তুরস্কের আনদালু নিউজ জানায়, গত বছর অক্টোবরে ইস্তাম্বুল শহরের একটি আদালত ফেতুল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তুরস্কের সরকার উৎখাত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় ১৬১ জন নিরস্ত্র মানুষ ও পুলিশ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যুত্থানচেষ্টা রুখতে জনগণ রাস্তায় নামলে ১০৪ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করে। সংঘর্ষের সময় মোট এক হাজার ৪৪০ জন আহত হয় বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় শনিবার তিন হাজারের বেশি সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তার ও দুই হাজার ৭০০ বিচারককে বরখাস্ত করেছে দেশটির সরকার। এ ছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রে পুনর্বিন্যাস করা হবেও বলে দেশটির সরকার জানিয়েছে।