তুরস্কে আবারও অভ্যুত্থানের আশঙ্কা
তুরস্কে সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির নেতারা।
এখনো দেশটির বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ইউনিটের কর্মকর্তাদের তাঁদের ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা ইস্যুতে ইস্তাম্বুল থেকে আংকারায় ফিরে আসতে দেরি করছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এরদোয়ান প্রশাসনের এই ধরনের দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের আশঙ্কার কিছু কারণ রয়েছে। ছয় লাখ সদস্যের শক্তিশালী বাহিনীর বহু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভেতরে অভ্যুত্থানের ইচ্ছা রয়ে গেছে। মোট ৩৭৫ জনের মধ্যে অন্তত ৮৫ জন জেনারেল ও অ্যাডমিরাল পদপর্যাদার কর্মকর্তাকে গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সরকার বিশ্বাস করে যে, জনসম্মুখে আসা কর্মকর্তারা আসলে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের ছোট একটি অংশ।
আরো বড় একটি অংশের পরিচয় এখনো প্রকাশ পায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া জেনারেলের সংখ্যা ১২৫।
গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিমানবাহিনীর উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এরকান ক্রিভাককে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধরত সেকেন্ড আর্মির সদস্যদের তাদের ক্যাম্পে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেকেন্ড আর্মির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জেনারেল আদেম হুদুতিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের ইস্তাম্বুলের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কর্মকর্তা আসলি আয়দিনতাসবাস জানিয়েছেন, তাঁরা আরো একটি অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করছেন। বিচারব্যবস্থা এবং সেনাবাহিনী থেকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের সরিয়ে ফেলার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বাহিনীগুলোর এক-চতুর্থাংশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গোপনে অভ্যুত্থানকে মদদ দেওয়ার অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এরদোয়ানের খুব কাছের কিছু মানুষও রয়েছেন। যেমন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব আলী ইয়াজিসি।
এদিকে এরদোয়ান প্রশাসনের চালানো অবাঞ্ছিত ব্যক্তি দূরীকরণ কর্মসূচি সাধারণ তুর্কি ও বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর মনে পশ্নের উদ্রেক করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে সরকার এবং তার দল বিরোধী প্রত্যেককে সরিয়ে ফেলা হবে। গতকাল দেশটির উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এক হাজার ৫৭৭ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে। জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বেচ্ছা নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তাঁর অনুসারী ১৫ হাজার ২০০ ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর অনুসারীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দি ইনডিপেনডেন্ট বলছে, এটা সত্যি যে এই অভ্যুত্থানের কারণ দেখিয়ে সেনাবাহিনী, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সিভিল সার্ভিস থেকে এরদোয়ানের অনুগত নন এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। তবে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মনে করছেন, এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এখনো বাহিনীগুলোর মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা সশস্ত্র অভ্যুত্থান করতে সক্ষম।