চুরির অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের

ম্যানিলায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো শনাক্ত করে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরির ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) ডলার ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে। ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ তথ্য জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার রাজধানী ম্যানিলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ বলেন, ‘পুরো ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) ডলারই ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। প্রেসিডেন্ট নিজে এই অর্থ ফেতর দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।’
তদন্তকারীদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ম্যানিলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) চারটি অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে এই অর্থ কয়েকটি ক্যাসিনোতে চলে যায়।
চুরি যাওয়া অর্থ দ্রুত উদ্ধারে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল বর্তমানে ম্যানিলায় রয়েছে। দলটি জানিয়েছে, চুরি যাওয়ার অর্থের মধ্যে তারা মাত্র দেড় কোটি ডলার ফেরত পেয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি এই অর্থের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এখানকার কর্তৃপক্ষ জব্দ করে রেখেছে।’
জন গোমেজ জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতের্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ফিলিপাইনে আসতে পারেন। এ সময় তিনি এই অর্থ ফেরত পেতে দুতের্তের সহযোগিতা চাইবেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এই অর্থ চুরির জন্য আরসিবিসিকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ লেনদেন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আরসিবিসি যদি পুরো ৮১ মিলিয়ন (আট কোটি ১০ লাখ) ডলার উদ্ধার করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিরুদ্ধে মামলা করবে।
বাংলাদেশ কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক মিনিট আগে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এই সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে আরসিবিসিকে এক বিলিয়ন পেসো (দুই কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানা ধরা হবে।
গোমেজ আরো জানান, তাঁরা রেমিট্যান্স কোম্পানি ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের বিরুদ্ধেও মামলা করবে। কারণ অর্থপাচারবিরোধী তদন্তকারীরা বলেছে, চুরি যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের কিছু অর্থ এই কোম্পানির মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে।
ফিলরেমকে উদ্দেশ্য করে গোমেজ বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা ওই অর্থ ফেরত দেবে। ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।’
গত মে মাসে রদ্রিগো দুতের্তের অধীনে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই অর্থ চুরির ওপর ফিলিপাইনের সিনেটে শুনানি বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আবার শুনানি শুরুর কোনো তারিখও ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু গোমেজ বলেন, তারা সিনেট প্রেসিডেন্ট একুইলিনো পিমেন্টেলকে আবার শুনানি শুরু করতে বলেছেন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনে ও দুই কোটি যায় শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কা থেকে অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ চুরির ঘটনার জের ধরে সম্প্রতি গভর্নর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় ড. আতিউর রহমানকে।