‘আমি যেন স্বপ্ন দেখছিলাম’
‘ভূমিকম্পে ঘরের চারপাশের দেয়াল ধসে পড়ে। বুঝতে পারি প্রচণ্ড ভূমিকম্প হয়েছে। এর পর মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছি অথবা আগেই মরে গেছি।’ ভূমিকম্পের পর ধ্বংস্তূপের মধ্যে দীর্ঘ ১২০ ঘণ্টা থাকার অভিজ্ঞতার এভাবেই বর্ণনা দেন নেপালের ১৫ বছর বয়সী কিশোর পেমবা তামাং।
গত ২৫ এপ্রিল ভূমিকম্পের পর পরই কাঠমান্ডুর একটি হোটেলের দুই মিটার পুরু ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েন পামবা তামাং। মৃত্যু হয়েছে না স্বপ্ন দেখছে এই ঘোরেই সময় কাটতে থাকে।
তৃষ্ণায় ঘামে ভিজে যাওয়া পোশাক চিপে পনি খায় সে। ভাগ্য ভালো থাকায় হাতের কাছে ছিল তাঁর দুপুরে খাবার। এই খাবার দিয়েই কাটিয়েছন টানা পাঁচ দিন।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেমবা তামাং বলে, ‘ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা অবস্থায় তার দুই দিন কাটে। মনে হয় কেউ আমাকে উদ্ধার করতে আসবে না।
চিৎকার করলেও কেউ জানতে পারবে না আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নেপালের একটি উদ্ধারকারী দল গত বৃহস্পতিবার পেমবা তামাংকে উদ্ধার করে।পরে তাঁকে নেপালে সাহায্য দিতে আসা ইসরায়েলের সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তামাং কিছুটা আহত হয়েছেন। মুখে ও হাতে আঘাত পেয়েছেন। তবে শরীরের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। শিগগিরই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান চিকিৎসকরা।
তামাংয়ের থাকার কোনো জায়গা নেই। একটি গেস্ট হাউসে থাকত তা এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাবার সঙ্গে যাবেন বলে জানায় তামাং। তবে পৈত্রিক বাড়িও ধ্বংসস্তূপের নিচে। ভূমিকম্পে নেপালের কাঠমান্ডুর বাইরের এলাকার ৯০ শতাংশ বাড়িঘরই ধ্বংস হয়েছে।
পেমবা তামাংয়ের বাবা সুরয়া তামাং বলেন, তাঁর বাড়িও ধ্বংস হয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে বর্তমানে তাঁবুতে বাস করছেন। তবে তিনি ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। ভূমিকম্পে তাঁর পরিবারের কাউকে হারাতে হয়নি এই ভেবেই তিনি খুশি।
গত বৃহস্পতিবার পেমবা উদ্ধারে প্রায় একই সময় কাঠমান্ডুর একই অঞ্চলে অপর একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক নারীকে উদ্ধার করা হয়। কৃষ্ণ দেবী খাদকা (৩০) নামের ওই নারী হোটেলটিতে রান্নার সহাকারী হিসেবে কাজ করতেন। উদ্ধারের পর তাঁকেও ইসরায়েলি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাঁর অবস্থা গুরুতর।
৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পাঁচ দিন পর তামাং ও খাদকাকে খুঁজে পাওয়ার ঘটনা বেশ বিরল। অবশ্যই গতকাল রোববারও কাঠমান্ডুর বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০১ বছরের বৃদ্ধসহ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এই মধ্যে ভূমিকম্পে নেপালে মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে।