মার্কিন নির্বাচনের গোপন জগৎ!

‘হিলারি ক্লিনটন বণিকদেরই প্রতিনিধি। লিবিয়াকে ধ্বংস করেছেন তিনি। প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এমনকি গণমাধ্যম পর্যন্ত হিলারির সমর্থক। ট্রাম্পকে জিততে দেওয়া হবে না।’
অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক ও উইকিলিকসের প্রধান নির্বাহী জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ এ মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক জন পিলগার ২৫ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অ্যাসাঞ্জের। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যে ইকুয়েডর দূতাবাসে। সেখানেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন অ্যাসাঞ্জ। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে রাশিয়ান গণমাধ্যম ‘রাশিয়া টুডে’ (আরটি)।
অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পুলিশে পরিণত হয়েছে।’
‘আইএস ও হিলারিকে অর্থ দিচ্ছে সৌদি ও কাতার’
অ্যাসাঞ্জ জানান, প্রকাশিত হওয়া ই-মেইলগুলো দেখলে দেখা যাবে, ২০১৪ সালে নিজের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জন পদেস্তাকে হিলারি জানিয়েছেন, সৌদি আরব ও কাতার অর্থায়ন করছে আইএসকে। এখন সৌদি ও কাতারের অর্থ ক্লিনটন ফাউন্ডেশনেও যাচ্ছে।
প্রকাশ হওয়া ই-মেইলগুলোই জানাচ্ছে, সৌদি ও কাতার আইএসকে অর্থ দিচ্ছে। অ্যাসাঞ্জ আরো বলেন, হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখনই সৌদি আরবের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের চুক্তিটি হয়। যার পরিমাণ ৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ঠিক ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়।
হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে অ্যাসাঞ্জ আরো বলেন, তিনি বণিকদের প্রতিনিধি। গোল্ডম্যান স্যাকসের মতো বিশাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ক্ষমতাবান অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে লড়ছেন হিলারি।
‘হিলারির ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পদেস্তার মেইলগুলোতে পাওয়া যায়, কীভাবে ওবামার কেবিনেটটা গঠন করা হয়েছিল। ওই কেবিনেটের অর্ধেকের বেশি ছিল সিটি ব্যাংকের প্রতিনিধি।’
অ্যাসাঞ্জ জানান, একাধিক ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থা, সমরাস্ত্র প্রতিষ্ঠান এমনকি গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকরা পর্যন্ত হিলারির পেছনে ঐক্যবদ্ধ।
‘লিবিয়া ধ্বংস করেছেন হিলারি’
অ্যাসাঞ্জ বলেন, লিবিয়াতে যুদ্ধ করার ইচ্ছে প্রেসিডেন্ট ওবামার ছিল না। তিনি শুরুতে এর বিরোধিতাই করেন। কে ওবামাকে রাজি করায়? তিনি হিলারি ক্লিনটন।’ তিনি বলেন, ‘এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এক হাজার সাতশোরও বেশি ইমেইল প্রকাশ করেছি আমরা। এগুলো হিলারি ক্লিনটনের। কেবল তেলের জন্য নয়, হিলারি চেয়েছিলেন দেশটির প্রধান গাদ্দাফিকে উৎখাত করতে।’
অ্যাসাঞ্জ জানান, ‘লিবিয়া টিকটক’ নামে খ্যাত ওই মেইলগুলোতেই আছে কীভাবে লিবিয়াকে ধ্বংস করার ছক করা হয়। লিবিয়া ধ্বংসের মধ্যমণি ছিলেন হিলারি। যার ফল হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। জিহাদিরা ছড়িয়ে পড়ে, আইএস ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে শরণার্থী সমস্যা।
‘ট্রাম্পকে জিততে দেওয়া হবে না’
ট্রাম্পের ব্যাপারে অ্যাসাঞ্জ শুরুতেই বলেন, ‘ট্রাম্পকে নির্বাচনে জিততে দেওয়া হবে না। কারণ প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান তাঁর অনুকূলে নেই।’
অ্যাসাঞ্জ বলেন, আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের চোখে ট্রাম্প কী? তারা ভাবে ট্রাম্প সাদা বর্জ্য, অশ্লীল। তিনি কখনো বদলাবেন না। এর মানে হচ্ছে শিক্ষিত কসমোপলিটন, নাগরিকরা ‘রেডনেক’দের মতোই আলাদা কিছু এবং আপনি এদের সঙ্গে কোনো ডিল করতে পারবেন না। ট্রাম্পের কথা ও কাজের মাধ্যমে পরিষ্কার। ট্রাম্পের সমাবেশে কারা যাচ্ছে, যারা মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজে নেই।
‘রাশিয়া জড়িত নয়’
অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে রাশিয়াকে দায়ী করা হয়। হিলারির প্রচারাভিযান থেকেই এসব দাবি করা হচ্ছে। ১৭টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে, আমাদের প্রকাশনার সঙ্গে রাশিয়া জড়িত। এটা মিথ্যা। আমরা বলতে পারি আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার সরকার নেই।’
অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘১০ বছর ধরে উইকিলিকস কাজ করছে। ওই ১০ বছরে ১০ মিলিয়ন ডকুমেন্টস আমরা প্রকাশ করেছি। বিভিন্ন উৎস থেকে এসব সংগ্রহ করা হয়েছে।’