চার সন্তান হত্যায় ২০ বছর জেল খেটে নির্দোষ প্রমাণিত মা
চার সন্তানকে হত্যায় ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল এক মায়ের। সেই সাজায় ইতোমধ্যে ২০ বছর জেল খেটেছেন তিনি। এমনকি, ওই মাকে দেশটির কুখ্যাত নারী সিরিয়াল কিলারেরও আখ্যা দেওয়া হয়। অবশেষে, নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে ওই মা। তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির নাগরিক ক্যাথলিন ফোলবিগের। আজ সোমবার (৫ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়ার কুখ্যাত নারী সিরিয়াল কিলার আখ্যা পান ওই মা। তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। ওই নারী নিজের চার শিশুকে হত্যা করেননি এমন প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে ক্ষমা করা হয়। তবে, এর আগেই এই মা ২০ বছর জেলে বন্দি ছিলেন। ছেলে স্যালেব ও প্যাট্রিক এবং মেয়ে সারাহ ও লরাকে হত্যার দায়ে আদালত তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু, সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ওই চার শিশু স্বাভাবিকভাবেই মারা যেতে পারে।
৫৫ বছর বয়সী এই মার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবিচার হয়েছে বলে দাবি করছে বিবিসি।
বিচার প্রক্রিয়া শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে আসছেন ফোলবিগ। চার সন্তানকে হত্যার দায়ে ২০০৩ সালে তাকে ২৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ফোলবিগের চার সন্তান মারা যায়। ১৯ দিন থেকে ১৯ মাস বয়সের মধ্যে ওই চারজন মারা যায়। বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছিলেন, ফোলবিগ তার সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন ফোলবিগ। এ নিয়ে ২০১৯ সালেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তবে, ওই কমিটি নতুন কিছু খুঁজে পায়নি। সেখানেও দোষী বলা হয় ওই মাকে।
বিবিসি জানিয়েছে, ফোলবিগের ওই মামলায় ২০২২ সালে নতুন করে তদন্ত নামে একটি দল, যার নেতৃত্ব দেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক টম বার্থরুস্ট। ওই শিশুদের জিন মিউটেশন পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়। পরে, প্রসিকিউটররা তাদের ভুল স্বীকার করেন।
আজ নিউ সাউথ ওয়েলসের (এনএসডাব্লিউ) অ্যার্টনি জেনারেল মাইকেল ডিলেইয়ের কাছে যান বার্থরুস্ট। তিনি তার প্রমাণগুলো তুলে ধরেন এবং জানান, ফোলবিগ এসব মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত নয়। এরপরেই এনএসডাব্লিউর গভর্নর ওই মাকে ক্ষমা করার কাগজে স্বাক্ষর করেন। এমনকি, খুব দ্রুতই ফোলবিগকে কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য বলে।
বিষয়টি নিয়ে ডিলেইয়ে বলেন, ‘এটি তার জন্য ২০ বছরের দীর্ঘ অগ্নিপরীক্ষা ছিল... আমি তার শান্তি কামনা করি।’ একই ধরনের কথা বলেছেন ওই নারীর স্বামী ক্রেইগ ফোলবিগ।
এনএসডাব্লিউ অ্যার্টনি জেনারেল মাইকেল ডিলেইয়ে বলেন, ‘ফোলবিগকে নিঃশর্ত ক্ষমা তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করবে না। তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ফৌজদারি আদালতে আপিল করতে হবে। যদি বার্থরুস্ট এমনটি করেন, তাহলে এটি শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগবে।’
বিবিসি বলছে, ফোলবিগ নামের ওই মা নির্দোষ প্রমাণিত হলে, তিনি ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। ১৯৯২ সালে এরকম একটি ঘটনায় এক নারী ১৩ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। তবে, আইনজীবীদের মতে, ফোলবিগ বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ পাবেন। কারণ, ১৯৯২ সালে ক্ষতিপূরণ পাওয়া ওই নারী মাত্র তিন বছর জেল খেটেছিলেন। অন্যদিকে, ফোলবিগ ২০ বছর সাজা খেটেছেন।