প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে বন উজাড়

Looks like you've blocked notifications!
ব্রাজিলের মারানহো প্রদেশে বন উজাড় করে নিবমাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি। ছবিটি গত ২১ এপ্রিল তুলেছিল এএফপি

২০২২ সালে বিশ্বে বন উজাড় বেড়েছে। গত বছরে শুধুমাত্র সুইজারল্যান্ডের আয়তনের সমান এলাকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন উজাড় হয়েছে। এ ছাড়া বছরটির প্রতি মিনিটে ১১টি ফুটবল মাঠের সমান বন ধ্বংস করা হয়েছে। বন উজাড়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। এক গবেষণার বরাতে আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ বন উজাড় বন্ধে একমত হয়েছিল বিশ্ব নেতারা। তবে, তারা তাদের সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। সারা বিশ্বে বন উজাড় বাড়লেও কমেছে ইন্দোনেশিয়ায়।

২০২১ সালে হওয়া কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্বের ১০০ নেতা বন বিষয়ে গ্লাসগো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যে ১০০ নেতা ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের দেশগুলোতে বিশ্বের মোট বনের ৮৫ শতাংশ রয়েছে। স্বাক্ষরকারী নেতাদের মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। স্বাক্ষর করলেও অ্যামাজন বন উজাড়ের পথ খুলে দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনে শিল্প ও উন্নয়নের দোহাই দিয়ে আইন প্রণয়নও করেছিলেন তিনি।

বন উজাড় বন্ধে ২০১৪ সালেও একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন বিশ্ব নেতারা। তবে, সেই চুক্তি অনুসারে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তার প্রতিফলন ঘটেছে গ্লাসগো চুক্তিতেও।

বিশ্বজুড়ে বন উজাড়ের এই গবেষণাটি চালিয়েছে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ। তাদের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্লাসগোতে যে চুক্তি হয়েছিল তা রক্ষা করা হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি উজাড় হচ্ছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন। 

প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ব্রাজিলের ম্যানগ্রোভ বন ও কঙ্গো এবং ইন্দোনেশিয়ার বনাঞ্চল বিপুল পরিমাণের কার্বন শুষে নিচ্ছে। প্রাকৃতিক ও পুরোনো এসব বনকে ধ্বংস বা পুড়িয়ে ফেলানোয় বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরিত হচ্ছে। এতে করে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যে ও লাখ লাখ মানুষের জীবিকার জন্য এই বনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞানীদের মতে, অন্য কোথাও নতুন করে গাছ লাগিয়েও এসব বনের অভাব পূরণ সম্ভব নয়। কারণ, দীর্ঘ একটি সময়ের পর এগুলো নিজের জায়গায় এসেছে।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহ করা তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে চালানো গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২১ এর তুলনায় ২০২২ সালে ১০ শতাংশ বেশি উজাড় হয়েছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন। ৪০ লাখ হেক্টর বন ধ্বংস বা পোড়ানো হয়েছে। এতে করে যতটুকু কার্বন নিঃসরণ হয়েছে তা ভারতের এক বছরের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নিঃসরিত কার্বনের সমান।

গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের হয়ে এই গবেষণাটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের রড টেইলর। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণার পর একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা কি ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করতে পারবো? সহজ উত্তর না। বিশ্বব্যাপী বন উজাড় বন্ধের পথ থেকে আমরা অনেক দূরে আছি।’ ব্রাজিলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন উজাড় ২০২২ সালে বেড়ে ১৪ শতাংশে ঠেকেছে বলেও জানান টেইলর।

ব্রাজিলের অ্যামাজন অঞ্চলের প্রদেশগুলোতে বন উজাড় গত তিন বছরে আগের সময়ের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সালে ব্রাজিলে ১৭ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন উজাড় হয়েছে। পাঁচ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর নিয়ে এরপরেই রয়েছে কঙ্গো। আর বছরটিতে বলিভিয়ায় উজাড় হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর বনভূমি।