দক্ষিণ কোরিয়ায় সামুদ্রিক লবণ কেনার হিড়িক

Looks like you've blocked notifications!
লবণের প্রতীকী ছবিটি এএফপি থেকে নেওয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত সামুদ্রিক লবণ কিনছেন। একইসঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট পণ্য কিনে মজুত করে রাখছেন। এর মূলে রয়েছে তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রয়টার্সের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে ভারতীয় গণমাধ্যমটি জানায়, ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০ লাখ টন তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ফেলবে জাপান। এর ফলে সমুদ্রের পানি দূষিত হয়ে যাবে, এই আতঙ্কে লবণসহ সমুদ্র থেকে পাওয়া এমনসব পণ্য কিনে মজুত করছে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ।

২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টোকিওর ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিকে শীতল রাখার জন্য ওই পানি ব্যবহার করা হয়। সেই পানিই সমুদ্রে ফেলবে জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল ট্যাংকগুলোতে থাকা এই দূষিত পানির নিঃসরণ প্রত্যাশিত। তবে, কখন এগুলো সমুদ্রে ফেলা হবে তার কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি।

সাগরে ফেলা পানি দূষিত বা তেজস্ক্রিয় নয়, এমনটা অনেক আগে থেকেই আশ্বস্ত করে আসছে জাপান সরকার। তারা বলছে, সাগরে ফেলার আগেই পানি থেকে তেজস্ক্রিয় আইসোটপ সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে, পানি থেকে হাইড্রোজেন আইসোটোপ আলাদা করা খুবই দূরূহ কাজ।

সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানি ফেলার খবরে জাপানের জেলেরাসহ গোটা অঞ্চলের জেলে ও দোকানিরা আতঙ্কে রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের সিওংনাম শহরের বাসিন্দা লি ইউং-মিন। দুই সন্তানের মা ৩৮ বছরের এই নারী বলেন, ‘সম্প্রতি আমি পাঁচ কেজি লবণ কিনেছি। আমি এত লবণ আগে কোনোদিন কিনি নাই। তবে, পরিবারের সুরক্ষায় এমনটি করেছি। আমি আমার সন্তানদের নিরাপদ খাবার দিতে চাই।’

লবণ কিনে মজুত করার হিড়িকে দক্ষিণ কোরিয়ায় লবণের দাম বেড়ে গেছে। দুই মাসের ব্যবধানে দেশটিতে লবণের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। তবে, মজুতের জন্য লবণের দাম বেড়েছে তা বলতে নারাজ দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। তাদের মতে, আবহাওয়া ও কম উৎপাদনের জন্যই দাম বেড়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার মৎসবিষয়ক উপমন্ত্রী সং সাং-কিউন বলেন, ‘লবণের সংকটের জন্য একদিনেই সরকারি গুদাম থেকে ৫০ টন লবণ বাজারে ছাড়া হয়েছে। বাজারের বর্তমান মূল্য থেকে ২০ শতাংশ কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে এই লবণ।’

সুপারশপে গিয়েও লবণ পাননি দক্ষিণ কোরিয়ার ৭৩ বছর বয়সী কিম মায়ং-ওকে। তিনি বলেন, ‘আমি লবণ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু, পেলাম না। গতবার যখন এসেছিলাম তখনও পাইনি। সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পানি ছাড়া নিয়ে আমরা ভয়ে আছি। আমার বয়স অনেক হয়েছে, অনেকদিন বেঁচেছি। এখন আর নিজের জন্য চিন্তা হয় না। তবে, বাচ্চাদের জন্য ভয় পাচ্ছি।’

দেশটির মৎস্য সম্পদ কর্তৃপক্ষ বলছে, তেজস্ক্রিয়তার জন্য লবণের খামারগুলোতে নজর রাখবে তারা। ইতোমধ্যে জাপানের পূর্ব উপকূলে ফুকুশিমার কাছে সমুদ্রের পানি থেকে সামুদ্রিক খাবার নিষিদ্ধ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ফেলার জাপানের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে চীনও। তেজস্ক্রিয় পানি নিয়ে জাপান মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, জাপানের এই পদক্ষেপ সামুদ্রিক পরিবেশ ও সারা বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।

এদিকে, জাপান সরকার বলছে, তারা প্রতিবেশীদের কাছে তাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত ও বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছে। গত সপ্তাহে জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট মিনিস্টার হিরুকাজু মাতসুনু বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গভীরভাবে দেখছি। সিউলের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করছি।’