প্যারিসে বাস ও ট্রাম পরিষেবা স্থগিত, উপকণ্ঠে কারফিউ

Looks like you've blocked notifications!
ফ্রান্সের প্যারিসে নাহেলের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। ছবি : এএফপি

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে এক কিশোর নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষোভ চলছেই। তৃতীয় রাতে পৌঁছানো এই বিক্ষোভের জেরে প্যারিসের বাস ও ট্রাম পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাত ৯টার থেকে গণপরিবহণের এই পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক প্রধান। খবর এএফপির।

প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ১৭ বছর বয়সী কিশোরের মৃত্যুকে ঘিরে বুধবার রাতে প্যারিসে বাস ও ট্রামকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এর জেরে গণপরিবহণের সেবা স্থগিত করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে আঞ্চলিক প্রধান ভালেরিয়ে পেকরেস লেখেন, ‘গনপরিবহণের কর্মী ও যাত্রীদের সুরক্ষায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, প্যারিসের উপকণ্ঠের বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতার শঙ্কায় এমনটি করা হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, প্যারিসের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে শুরু করে ক্লামার্ট পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। আজ স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। আজ থেকে শুরু হয়ে আগামী সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন নির্দিস্ট সময়ে চলবে এই কারফিউ।

ক্লামার্ট শহরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এক বার্তায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ক্লামার্ট একটি নিরাপদ ও শান্ত শহর। আমরা এটিকে সেভাবেই রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

গত মঙ্গলবার প্যারিসের উপকণ্ঠ নানতেরেতে ট্রাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৭ বছর বয়সী নাহেল এম। হলুদ মার্সিডিজ চালাচ্ছিলেন  ওই কিশোর। পুলিশ অবশ্য প্রথমে জানিয়েছিল, ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর পুলিশের এক কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিল। তাকে থামানোর জন্য গুলি করা হয়।

নাহেলের মৃত্যুতে চলা বিক্ষোভে আজ নেতৃত্ব দেন তার মা মোনিয়ার। সন্তানহারা ওই মা বলেন, ‘আমার জীবন আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা খুব কষ্টের। তাকে ছাড়া সব শূন্য লাগছে। আমি একাই ওকে বড় করেছি।’

চলমান বিক্ষোভ দমাতে ৪০ হাজার পুলিশ ফ্রান্সের রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে। আর নাহেলকে হত্যায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, নাহেলের মৃত্যুতে অভিযুক্ত করা হয়েছে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে। আজ প্রসিকিউটর পাসকেল পার্চে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে মাত্র দুজন পুলিশ কর্মকর্তার ডিউটি শুরু হয়। তারা ৭টা ৫৫ মিনিটে পোল্যান্ডে নিবন্ধিত একটি হলুদ রংয়ের মার্সিডিজ নানতেরের রাস্তায় দেখেন। গাড়িটির গতি বেশি ছিল এবং এটি বাস লেনে চলছিল। তখন মোটরসাইকেলে থাকা ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা দেখেন, কম বয়সের একজন যানটি চালাচ্ছিলেন। পরে, তারা তাদের জরুরি সাইরেন বাজান। এরপর গাড়িটি একটি সিগনালে আটকে পরে ও এর চালককে বের করা হয়। সিগনালে দাঁড়ানোর আগে মার্সিডিজ গাড়িটি ট্রেন স্টেশনের দিকে থাকা একটি গ্যাস স্টেশনে আঘাত করে।’

প্রসিকিউটরের মতে, সিগনালে চিৎকার করে নাহেলকে থামতে বলেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন গাড়িটির বাম দিকে নিজের পজিশন নেয়। বাকিজন গাড়িটির চালকের পাশে থাকা দরজায় অবস্থান নেন। পরে, দুজনই তাদের বন্দুক বের করে নাহেলকে ইঙ্গিত করে বের হতে বলে। কিন্তু, ওই কিশোর গাড়ি থেকে বের না হয়ে পুনরায় গাড়িটি চালানো শুরু করে। এমন সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাহেলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন। কয়েক ডজন মিটার এগিয়ে গাড়িটি বিধ্বস্ত হয়।

মেডিকেল টিম না আসা পর্যন্ত নাহেলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে, তাকে আর রক্ষা করা যায়নি। রাত ৯টা ১৫ মিনিটে নাহেল মারা যান।

এদিকে, যে পুলিশ কর্মকর্তার গুলিতে নাহেল মারা গেছে তার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, তার রক্তে অ্যালকোহলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া নাহেল এর আগেও অপরাধ করেছেন। গত রোববারও আইন অমান্য করায় প্রসিকিউটর অফিসে যেতে হয় এই কিশোরকে। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে কিশোর আদালতের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তবে, সেই হলুদ রংয়ের মার্সিডিজ গাড়িটিতে কোনো ধরনের অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি।

ঘটনার সময় নাহেলের গাড়িতে নাহেল ছাড়াও আরও দুজন ছিলেন। এর মধ্যে একজন পালিয়ে গেছেন। অন্যজন তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে আটকের পর গত মঙ্গলবারই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, নাহেলের মৃত্যুর ঘটনায় নানতেরেতে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি তদন্ত করছে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। আর অন্যটি করছে ন্যাশনাল পুলিশ ইন্সপক্টোরেট (আইজিপিএন)।