ক্ষেপণাস্ত্রসহ অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়াতে কিমের নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!
উত্তর কোরিয়ার একটি সমরাস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। ছবি : এএফপি        

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্প্রতি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের প্লান্টসহ দেশটির বিভিন্ন গোলাবারুদ তৈরির কারখানা পরিদর্শন করে ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট লাঞ্চার শেল ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই তথ্য দিয়েছে।

কিম জং উন সম্প্রতি প্রতিরক্ষা অবকাঠামোগুলোতে পরিদর্শন শুরু করেছেন আর সোমবারের এই পরিদর্শনে তিনি ব্যাপকহারে সমরাস্ত্রের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন। খবর আলজাজিরার।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া বার্ষিক সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় উত্তর কোরিয়া এই আয়োজনকে আগ্রাসনের মহড়া হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে যে, তারা মনে করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে চাইছে।

উত্তর কোরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম কেসিএনএ  জানিয়েছে, গত শুক্রবার ও শনিবার কিম জং উন ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানাসহ ভ্রাম্যমাণ উৎক্ষেপণ প্লাটফর্ম, সাঁজোয়া যান ও কামানের গোলা উৎপাদন করা হয় এমনসব কারখানা পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনের সময় একটি ক্ষেপণাস্ত্র কারখানায় কিম জং উন সম্মুখ যুদ্ধের জন্য প্রয়োজন হয় এতো পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের লক্ষ্যে ‘ব্যাপক হারে’ সমরাস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

কেসিএনএ জানায় এ সময় কিম বলেন, ‘কোরিয়ান পিপলস আর্মির যুদ্ধ প্রস্তুতি জোরদারে সমরাস্ত্র শিল্পকারখানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব রয়েছে।’

অন্যান্য কারখানা পরিদর্শনের সময় কিম জং উন কর্মকর্তাদের প্রতি আরও আধুনিক ভ্রাম্যমাণ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ট্রাক তৈরি নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি মাল্টিপল রকেট লঞ্চার শেলের ব্যাপক মাত্রায় উৎপাদন বাড়ানোরও নির্দেশনা দেন। তিনি এ সময় একটি নতুন সাঁজোয়া সামরিক যান নিজে ড্রাইভ করেন।

২০১৯ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উচ্চমাত্রার কূটনৈতিক সম্পর্কের পর থেকেই কিম তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার বাড়িয়ে তুলছেন। ২০২২ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী ১০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এসব পরীক্ষার বেশিরভাগই দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়ার পাল্টা জবাব দিয়ে চালায় দেশটি।

এদিকে, এ মাসের শেষের দিকে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়ার প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়া নতুন করে সমরাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়া এটিকে আগ্রাসনের মহড়া হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জোট বলছে উত্তর কোরিয়ায় হামলার কোনো ইচ্ছ তাদের নেই।

কিমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া মনে করে যে কোনো ধরনের যুদ্ধ মোকাবিলায় দেশটির অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যাতে সে নিশ্চিতভাবে শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এদিকে, এ মাসের শুরুতে হোয়াইট হাউস জানায় তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, গত মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু পিয়ংইয়ং সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য দেশটির কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা বাড়ানোর লক্ষ্যে।

তবে উত্তর কোরিয়া ওয়াশিংটনের এই দাবি বাতিল করে দিয়ে বলেছে তারা রাশিয়ার কাছে কামানের গোলা বা অন্যান্য অস্ত্রশসস্ত্র বিক্রি করেনি। কিন্তু দেশটি সরকারিভাবে যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে আসছে এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা এলাকার পুনর্গঠনে কর্মী পাঠানোরও ইঙ্গিত দিয়েছে।

করোনা অতিমারী পরবর্তী অর্থনৈতিক দুরাবস্থা কাটাতে ও দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অব্যাহত চাপের মুখে কিম জং উন রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।