কেন ইসলামিক ব্যাংকিং চালু করছে রাশিয়া?

Looks like you've blocked notifications!
রাশিয়ার ব্যাংকের ছবিটি এএফপি থেকে নেওয়া

পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। দেশটিতে প্রায় আড়াই কোটি মুসলমান ধর্মালম্বীর বাস। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ করা দেশটিতে অনেকগুলো ইসলামিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও ছিল না ইসলামিক ব্যাংকিং। অবশেষে, পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিকভাবে ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে রাশিয়া। আজ বুধবার (৩০ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত ৪ আগস্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য একটি আইনে স্বাক্ষর করেন। এই পাইলট প্রোগ্রাম চালু হবে মুসলিম অধ্যুষিত চারটি অঞ্চলে। সেগুলো হলো- তাতারস্থান, বাশকোরোস্তান, চেচনিয়া ও দিগেস্তান। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলে ইসলামিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

পাইলট প্রোগ্রামটি সফল হলে গোটা রাশিয়াজুড়ে এই ব্যাংকিং অবস্থা চালু করা হবে।

ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার ভিন্নতা?

ইসলামের শরিয়াহ আইন অনুসারে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলে। ইসলামিক আইন মতে, সুদ সম্পর্কিত লেনদেন নিষিদ্ধ। পাশাপাশি অর্থের বিপরীতে সুদ নেওয়াও হারাম।

প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঋণভিত্তিক হলেও ইসলামিক ব্যাংকিং সম্পদভিত্তিক। ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মুনাফা ও ঝুঁকি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রাহক দুপক্ষই বহন করে।

রাশিয়ার ইসলামিক অর্থায়ন বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের নির্বাহী সচিব মাদিনা কালিমুললিনা বলেন, ‘কোনো ব্যাংক গ্রাহকের আর্থিক সমস্যা এবং দেউলিয়াত্ব থেকে উপকৃত হতে পারে না। ইসলামিক অর্থায়ন ব্যবস্থা অংশীদারত্ব ভিত্তিক সম্পর্ককে উৎসাহিত করে, যা প্রচলিত অর্থের ক্ষেত্রে খুব কমই ঘটে।’

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সমাজের ক্ষতিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে না। উদাহরণ টেনে গণমাধ্যমটি বলে, অ্যালকোহল, তামাক বা জুয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানকে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অর্থায়ন করা হয় না। কালিমুললিনা বলেন, ‘ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধারণার ওপর নির্ভর করে অর্থায়ন করা হয় না। এ ছাড়া জামানত নিয়েও অর্থায়ন করা হয় না।’

কেন রাশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিং চালু করছে?

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেবেরব্যাঙ্ক। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয় এই ব্যাংকটি। এই ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গানেভের তথ্য মতে, ইসলামি ব্যাঙ্কিং খাতের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এটি সাত দশমিক সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কালিমুললিনা বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান বাজারের নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের সুরক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু, ইসলামিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধকী অর্থায়ন দিতে পারে না। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারে না। কারণ, কর্মসূচির আওতায় দেওয়া সমস্ত ঋণ সুদিভিত্তিক।’

রাশিয়ার ইসলামিক অর্থায়ন বিশেষজ্ঞদের সংগঠনের নির্বাহী সচিব বলেন, ‘নতুন আইনে বন্ধকী ঋণের বিষয়গুলো আংশিকভাবে সমাধান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই পাইলট প্রোগ্রামটি ইসলামিক ফাইন্যান্স ডেভেলপমেন্টের জন্য আরও শর্ত তৈরি করার অনুমতি দেবে।’

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরেই কি রাশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে?

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিদর্শক দিয়ানা গালেভা বলেন, ‘২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর থেকেই রাশিয়ায় ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়ে আলোচনা চলছে। ওই সময় তারল্য সংকটের ভুগেছিল রাশিয়ার ব্যাংকগুলো। এর জেরে দেশটির নীতি নির্ধারকরা নগদ অর্থের জন্য বিকল্প উৎস খুঁজছে। আর দুদিন বাদে চালু হতে যাওয়া ইসলামিক ব্যাংকিং দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফসল।’

গালেভা বলেন, ‘২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় হামলার জেরে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমারা। ক্রিমিয়া অধিকৃত করার পরই রাশিয়ার ব্যাংকগুলো চাপ অনুভব করতে থাকে। ওই সময় রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর সংগঠন ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রস্তাবনা দেয়। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কমিটি করার কথা বলা হয়, যা শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নজরদারি করবে।’

আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। এরপরেই দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধের জেরে মস্কোর ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। এর ফলে রাশিয়ার আর্থিক সেক্টর বেশ চাপে রয়েছে যা, মস্কোতে ইসলামিক ব্যাংকিং চালু করার বিষয়টি ত্বরান্বিত করেছে।

গালেভা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সংকট ঘণীভূত হয়েছে। এর জেরে পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেড়েছে। আর পূর্বের অনেক দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায়ে মস্কো এমনটা করছে।’