ভারতে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, যা জানা দরকার

Looks like you've blocked notifications!
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন রোগী ভর্তি হওয়ার পর ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কোচি শহরে এরনাকুলাম মেডিকেল কলেজে একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভাইরাস প্রতিরোধক পোশাকে স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি : এএফপি 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর বিরল ও মগজ ধ্বংসকারী ভাইরাসটি থেকে প্রাণহানি এড়াতে রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গঠন করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ এলাকাও।

২০১৮ সালের পর থেকে চতুর্থ বারের মতো ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ। ২০১৮ সালে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে মারা গিয়েছিল ২১ জন। গতকাল বুধবার থেকে কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজ্যজুড়ে কঠোর আইসোলেশন নীতিমালা আরোপ করেছে। খবর আলজাজিরার।

নিপাহ ভাইরাস কী?

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্যানুযায়ী নিপাহ ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৯৯ সালে। সে সময় মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মহামারীর মতো শুকর ও মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস (এনআইভি)। ওই সময়টিতে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় একশরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া আরও প্রায় তিনশ মানুষ আক্রান্ত হয় ভাইরাসজনিত এই রোগটিতে। এই রোগের কারণে দেশগুলোর অর্থনীতিতে বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কেননা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ১০ লাখেরও বেশি শুকরকে মেরে ফেলা হয়েছিল।

যদিও ১৯৯৯ সালের পর মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি তবে এশিয়ার কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে প্রতিবছরই কেউ না কেউ এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়।

নিপাহ ভাইরাস মূলত জুনোটিক ভাইরাস, যার অর্থ হলো এটি জীবজন্তু থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে প্রকাশিত সিডিসির একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। প্রাণীদের মধ্যে মূলত বাদুড় এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে।

বাদুড়, শুকর ও মানুষের মাধ্যমে (মুখের লালা ও মূত্র) এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের কারণে প্রাণীদেহ থেকে এটি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। যখন একজন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন তা সহজেই আরেকজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

মানবদেহে কোনোরকম উপসর্গ ছাড়াই এটি সংক্রমিত হয় যার ফলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসযন্ত্রের সাধারণ থেকে চরম আকারের নানা রকম সমস্যা। এই ভাইরাস মস্তিষ্কের মগজকে ফুলিয়ে দেয় যার ফলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একজন রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে মগজ ফোলা বা এনসেফালাইটিসের কারণে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ।

তবে, যারা এনসেফালাইটিস থেকে সেরে ওঠেন তারা দীর্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন স্নায়ুরোগে ভুগতে থাকেন, যার মধ্যে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, আচরণগত পরিবর্তন, অনুভূতির পরিবর্তন অন্যতম।

নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় কী?

এখনও নিপাহ ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে আগের মহামারীর তথ্য, নিয়মকানুন, শুকরের খামারে কার্যকর ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে ব্যাপক আকারে পরিচ্ছন্নতার কাজই পারে আমাদের এই রোগ থেকে বাঁচাতে।

প্রাণীদেহে যদি এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় তবে সেই সব প্রাণীকে আলাদ করে ফেলতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই সমস্ত প্রাণীগুলো মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

যেহেতু এনআইভির কোনো সুনির্দিষ্ট টিকা নেই তাই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে সচেতনতাই পারে আমাদের রক্ষা করতে। পূর্বসতর্কতাই হতে পারে এই রোগ থেকে বাঁচার অন্যতম হাতিয়ার।

এ ছাড়া বাদুরের সংস্পর্শে আসা ফলের মাধ্যমে যাতে নিপাহ ভাইরাস না ছড়ায় সেজন্য খাওয়ার আগে ফল ভালোভাবে ধুয়ে, খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাদুরের কামড়ের দাগ রয়েছে এমন ফল ফেলে দেওয়া উচিত।