শস্য নিয়ে বিরোধ, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা পোল্যান্ডের

Looks like you've blocked notifications!
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি। এএফপির ফাইল ছবি

ইউক্রেনের অন্যতম পরম বন্ধু রাষ্ট্র পোল্যান্ড শস্য নিয়ে কূটনীতিক বিরোধের জেরে দেশটিতে আর অস্ত্র সরবরাহ না করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর পরিবর্তে তারা আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করবে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার মধ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। খবর বিবিসির।

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির করা মন্তব্যের জন্য মঙ্গলবার ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পোল্যান্ড। জেলেনস্কি বলেন, ‘কিছু দেশ ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে, যাকে ওয়ারশ পোল্যান্ডের ব্যাপারে অন্যায় বলে নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু, দেশটি যুদ্ধের প্রথম দিন থেকে ইউক্রেনকে সমর্থন করেছে।’

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক টেলিভিশন ভাষণে ইউক্রেনকে আর অস্ত্র সরবরাহ না করার ঘোষণা দেন। শস্য আমদানি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত উত্তেজনা বৃদ্ধির একদিন পরই এ ঘোষণা দেন তিনি।

মোরাউইকি বলেন, ‘আমরা আর ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করছি না, কারণ আমরা এখন পোল্যান্ডকে আরও আধুনিক অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করছি।’

ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই এই শস্য বিরোধ শুরু হয়। রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরের প্রধান শিপিং রুট বন্ধ করে দেয় এবং ইউক্রেনকে স্থলপথে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য করে। এর ফলে মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণ শস্য যেতে শুরু করে।

এরপর স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাময়িকভাবে পাঁচটি দেশে শস্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। দেশগুলো হলো– বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া। এ নিষেধাজ্ঞা ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয় এবং ইইউ এটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

ইউরোপীয় কমিশন বারবার বলেছে, জোটের বাণিজ্য নীতি তৈরি করা আলাদাভাবে ইইউ সদস্যদের ওপর নির্ভর করে না। এই সপ্তাহের শুরুতে ইউক্রেন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ওই দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মামলা করেছে। দেশগুলোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে তারা।

মোরাউইকি বলেন, ইউক্রেন শস্য বিরোধ বাড়ালে তারা কিয়েভ থেকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের সংখ্যা বাড়াবে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পোল্যান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বহুপাক্ষিক ফোরাম বা আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ পাঠানো আমাদের মধ্যে মতবিরোধ নিরসনের সঠিক পদ্ধতি নয়।’

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশ তিনটি বলেছে, তারা এখনও তাদের মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশের বাজারে শস্য পরিবহণের অনুমতি দেবে।

পোল্যান্ড রাষ্ট্রদূতকে তলব করায় দেশটিকে ‘আবেগ একপাশে সরিয়ে রাখার’ আহ্বান জানিয়েছে কিয়েভ। একইসঙ্গে বিরোধ মীমাংসার জন্য দেশগুলোর গঠনমূলক পন্থা অবলম্বন করা উচিত বলেও জানায় তারা।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিনা কোলোনা বলেন, ‘একটি ইইউ সমীক্ষায় দেখা গেছে– ইউক্রেনীয় শস্য আমদানি ইউরোপের কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।’ দেশগুলোর মধ্যে এই উত্তেজনাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবেও বর্ণনা করেন তিনি।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষায় ইউক্রেনকে অনেক সমর্থন দিয়েছে পোল্যান্ড। এরমধ্যে ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক প্রদানের জন্য জার্মানিকে রাজি করানো, এমনকি দেশটিকে যুদ্ধবিমানের প্রদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে পোল্যান্ড। এছাড়া ইউক্রেন থেকে ১৫ লাখের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি।