পশ্চিম তীরে বেআইনি হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের

Looks like you've blocked notifications!
ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলের শহর তুলকার্নের নুর শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় একটি গাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই গাড়ির পেছনে কয়েকজন ফিলিস্তিনি বসে রয়েছেন। ছবি : এএফপি

ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত হামলায় অধিকৃত পশ্চিম তীরের মানবাধিকার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সেখানে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বেআইনি হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। খবর এএফপির।

প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, আজ জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনে পশ্চিম তীরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় সমরাস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে আটক, দুর্ব্যবহার বন্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া চলাচলের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আইন প্রয়োগের প্রেক্ষাপটে যে সামরিক কৌশল ও অস্ত্রের ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তির ব্যবহার ও ফিলিস্তিনিদের প্রভাবিত করে এমন বিস্তৃত স্বেচ্ছাচারী আচরণ এবং চলাচলে বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বর্তমানে যে সহিংসতা ও দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে তা আগে দেখা যায়নি।’

এএফপি বলছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীর ও পশ্চিম জেরুজালেমের মানবিক অবস্থার অবনতি হয়েছে তা জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ১৪০ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সংগঠনটি। এর মধ্যে যুদ্ধবিরতির সময় কিছু পণবন্দিকে মুক্তি দেয় হামাস। তবে, এখনও ১২৯ জনকে বন্দি করে রেখেছে সশস্ত্র সংগঠনটি।  

প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনের হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ও পশ্চিম তীরে ক্রমাগতভাবে পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনীর আকাশ, নৌ ও স্থলপথে চালানো হামলায় ফিলিস্তিনে অন্তত ২১ হাজার ১১০ এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘ থেকে আজ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ৭ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে করা। এতে বলা হয়, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বিমান হামলা ব্যাপক আকারে বেড়েছে। শরণার্থী শিবির ও জনকীর্ণ এলাকাগুলোতে হামলা চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনও বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে করে হতাহত ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।

বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘বসতি স্থাপনকারীদের এবং ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক সহিংসতার সমস্ত ঘটনা তদন্ত করতে হবে। যে কোনো ধরণের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলের হামলায় ৩০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। যার মধ্যে ৭৯ জনই শিশু। ৩০০ জনের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৯১ ফিলিস্তিনি। আর বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিহত হয়েছে অন্তত আটজন। আর বাকি একজন ইসরায়েলি বাহিনী বা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন।