নোবেলজয়ী হয়েও দণ্ডিত যারা

Looks like you've blocked notifications!

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ৩০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। পরে আপিলের শর্তে ড. তাকে এক মাসের জামিন দিয়েছেন আদালত।

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই রায়ের বিষয়ে বিশ্বজুরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে, শান্তিতে নোবেলবিজয়ী কারাদণ্ড পাওয়াদের মধ্যে ড. ইউনূস একা নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও কারাদণ্ড পেয়েছেন অনেকে।  আসুন জেনে নেই তাদের কয়েকজনকে। 

মিয়ানমারের অং সান সু চি

অং সান সু চি মিয়ানমারের রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও লেখিকা। দেশটির প্রথম রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রীর সমমান) হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য সু চি ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তবে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। পরে সামরিক আদালত বিভিন্ন মামলায় সু চিকে প্রায় ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। এর পর থেকে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাবেক এই নেত্রীকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তখন থেকেই ১৯টি অভিযোগে তার বিচার চলছে।

বেলারুশের আলেস বিয়ালিয়াৎস্কি

২০২৩ সালের মার্চে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী ও মানবাধিকারকর্মী আলেস বিয়ালিয়াৎস্কিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় বেলারুশের আদালত। বিরোধীদের কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ও বেলারুশে অর্থ পাচারের অভিযোগে ২০২১ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিয়ালিয়াৎস্কি। ২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন বেলারুশের বিয়ালিয়াৎস্কি।

ভন অজিয়েস্কি

নোবেলজয়ীদের শাস্তি পাওয়ার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, হিটলারের আমলে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৩৫ সালে গেলে ভন অজিয়েস্কিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

বাকস্বাধীনতা ও শান্তির সপক্ষে তার উজ্জ্বল অবস্থানের কারণে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি যেন নরওয়েতে তা গ্রহণ করতে না যেতে পারেন সে কারণে জেলে পাঠানো হয়। এ সময় তাকে নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। এর আগে ১৯৩৩ সালে হিটলারের ক্ষমতা দখলের আগে বার্লিনে পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেওয়ার মামলায় অভিযুক্ত করা হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এই জার্মান নাগরিককে। সেসময় হিটলার এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি কোনো জার্মান নাগরিককে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আইন চালু করেন।

লিউ শিয়াবো

জেলেই মৃত্যু হয়েছিল নোবেল বিজয়ী চীনা মানবাধিকার কর্মী লিউ শিয়াবোর। যদিও নোবেলজয়ের আগে থেকেই তিনি ছিলেন জেলে। ২০১০ সালে চীনা মানবাধিকার কর্মী লিউ শিয়াবোকে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার এক বছর আগে জেলে পাঠানো হয়। তিনি চীনে অহিংস উপায়ে মৌলিক মানবাধিকারের জন্য আন্দোলন করে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। চীনে ক্ষমতার দান উলটে দেওয়ার কুশীলব অভিযোগে তাকে বিচার করে জেলে পাঠানো হয়। তার এগারো বছরের জেল হয়েছিল। তিনি চীনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। উত্তর-পূর্ব চীনের একটি হাসপাতালে লিভার ক্যান্সারে ৬১ বছর বয়সে বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী

ইরানের নারী অধিকারবিষয়ক প্রচারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের ভূষিত হয়েছেন ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর। ২০১৯ সালে সহিংস প্রতিবাদের শিকার একজন ইরানি নাগরিকের স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কারণে ইরানি কর্তৃপক্ষ নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তার করে। মোহাম্মদির রয়েছে দীর্ঘ কারাবাসের ইতিহাস ও কঠোর দণ্ড লাভের অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি তার মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছে।