ইউরোপের দেশগুলোর দুশ্চিন্তা বাড়ালেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের জেরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ন্যাটোর মূল বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এতে ইউরোপের দেশগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, ‘ন্যাটো কখনোই এমন কোনো সামরিক জোট নয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের রসিকতার ওপর নির্ভর করে।’
গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ডোনাল্ড ট্রাম্প সাউথ ক্যারোলাইনায় এক নির্বাচনি প্রচার সমাবেশে বলেন, ‘ন্যাটোর শরিক দেশগুলো যদি তারা তাদের ভাগের অর্থ না দেয়, তাহলে তিনি যা খুশি করার জন্য রাশিয়াকে উৎসাহিত করবেন।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে আতঙ্কের স্রোত বয়ে গেছে। কারণ, ট্রাম্পের আগামী নির্বাচনে জেতার সম্ভবনা আছে।
ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ন্যাটোর শরিকদের নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন, তার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর শরিক দেশের ওপর সমানভাবে পড়বে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সেনাদের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।’
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ন্যাটো থেকে সরে আসার হুমকি অনেকবার দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি একাধিকবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে তাদের সুরক্ষা দিচ্ছে, এজন্য ইউরোপকে অর্থ দিতে হবে। এর ফলে ন্যাটোর চুক্তির বহু আলোচিত পাঁচ নম্বর অনুচ্ছেদ পালন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ন্যাটোর কোনো একটি দেশ যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র সেই আক্রমণকে নিজেদের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখবে এবং তা প্রতিহত করবে।
বাস্তবতা হলো ট্রাম্প ন্যাটো নিয়ে আবারও সেই বিতর্কিত কথা বললেন। কূনীতিকদের মতে, প্রচারে নেমে এই কথা বলাটা খুবই উদ্বেগজনক। ন্যাটোর অনেক শরিক দেশই মনে করে, ট্রাম্প যদি আবার জিতে আসতে পারেন, তাহলে তিনি আগেরবারের থেকে অনেক বেশি করে শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন।
ব্রাসেলসের ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপীয়ান স্টাডিজের এলিসন উডওয়ার্ড বলেন, ‘গতবার ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন দেখা গিয়েছিল। একটা নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। তাই যদি ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে কী হবে, ইউরোপের দেশগুলোর এই চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।’
এদিকে ট্রাম্পের এই হুমকি এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন ইউক্রেনে রাশিয়া আরও তীব্র আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যখন কিয়েভের জন্য নতুন প্যাকেজে সায় দেয়নি মার্কিন কংগ্রেস, যখন ইউরোপের দেশগুলো তাদের অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক জার্মান মার্শাল ফান্ড ইস্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিশেল বারানওস্কি বলেন, ‘ট্রাম্পের মন্তব্য থেকে এই সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে, তিনি ক্ষমতায় এলে রাশিয়া ন্যাটোর শক্তি পরীক্ষা করবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইউরোপের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে। ইউরোপের কোনো দেশের ওপর আক্রমণ হলে যুক্তরাষ্ট্র পাশে দাঁড়াবে কি না, সেই চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে।’
ব্রাসেলসের কূটনীতিকদের মুখেও একই চিন্তার কথা শোনা যাচ্ছে। তারা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় জানান, ট্রাম্পের মন্তব্যের ফলে এই সামরিক জোটের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। ট্রাম্প যা বলেছেন তা হেঁয়ালির মতো। কারণ, ইউরোপের দেশগুলোর সামনে এমন কোনো বিল নেই, যা তাদের পূরণ করতে হবে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের অর্থ হলো, ইউরোপের দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জিডিপির দুই শতাংশ অর্থ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করছে না। ২০১৪ সালে ওয়েলসে ন্যাটো শীর্ষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
জার্মানি সম্ভবত এ বছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে পারবে, সেটাও ১০ হাজার কোটি ইউরোর বিশেষ তহবিলের করার ফলে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ওই তহবিল তৈরি করা হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের কথার মধ্যেও যুক্তি আছে। এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাম্পের কথায় ইউরোপের কিছু দেশের ঘুম ভাঙবে।’