পাকিস্তানে জোট সরকার গঠনে মুসলিম লীগ ও পিপলস পার্টির চুক্তি

Looks like you've blocked notifications!
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এনের নেতা শেহবাজ শরীফ (বামে), পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো (ডানে) ও কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি (মাঝে)। ছবি : এএফপি

পাকিস্তানের দুটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল জোট সরকার গঠনে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন শেহবাজ শরীফ। ধারণা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে এ মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলে কোনো দল সরকার গঠনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে যাবে। খবর এএফপির।

সেনা সমর্থিত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি গতকাল মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের আলোচনার পর তারা জোট সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যেখানে ছোট ছোট আরও কয়েকটি দল থাকবে।

নির্বাচনের আগে ব্যাপক দমনপীড়নের শিকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) অংশ না নিলেও দলটির প্রতি অনুগত নেতারা নির্বাচনে দাঁড়ান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনও পায় স্বতন্ত্র সদস্যরা। কিন্তু সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদের বিরোধী শিবিরেই থাকতে হচ্ছে।

পিএমএল-এন এবং পিপিপির চুক্তি অনুসারে শেহবাজ শরীফ হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন আততায়ীর হাতে নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর স্বামী আসিফ আলি জারদারি।

আরও পড়ুন : ইমরান খানের দলের বিক্ষোভে উত্তপ্ত পাকিস্তান, ১৪৪ ধারা জারি

গতকাল গভীর রাতে বেনজীর ও জারদারির ছেলে এবং পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং আমরা সরকার গঠন করতে যাচ্ছি।’

বিলাওয়াল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে শেহবাজ শরীফ খুব শিগগিরই দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এবং আশা করছি, পুরো পাকিস্তানের জনগণ সরকারের সফলতার জন্য প্রার্থনা করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়ালের পাশে থাকা শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘৭৬ বছর পর আমরা নিজেদের ঋণের ওপর নির্ভরশীল হিসেবে দেখতে পাচ্ছি, আর এই অবস্থা থেকে বের হওয়াটা সহজ হবে না। আমরা কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আমাদের এই চ্যালেঞ্জ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’

বিলাওয়াল ভুট্টো জানান, মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টনে সম্মতিতে পৌঁছানো গেছে এবং সামনের দিনগুলোতে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি নতুন জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসবে এবং তখন জোট সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পাবে।

২০২২ সালে ক্ষমতাসীন ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে একজোট হয়েছিল পিএমএল-এন ও পিপিপি। এরপর অল্প ব্যবধানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এই দুই দল যার প্রধানমন্ত্রী হন শেহবাজ শরীফ। গত বছরের আগস্ট মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জোট সরকার।

এরপর শেহবাজ শরীফের ভাই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসেন এবং নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন। তবে সামিরক বাহিনীর সমর্থন থাকা সত্ত্বেও মুসলিম লীগ নির্বাচনে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে গত আগস্ট মাস থেকে জেলবন্দি করা হয়। দুর্নীতি, রাষ্ট্রদ্রোহ ও অবৈধ বিয়ের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে এই মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করা ইমরান বলেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তবে এবারের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ভোটগ্রহণের দিন সারা দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে। নির্বাচনের ভোট গণনা করতে লাগে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়।