নির্বাচনে জয় পেয়ে এবার বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন পুতিন!

Looks like you've blocked notifications!
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার মস্কোর রেড স্কয়ারে রাশিয়ার ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করার দশম বার্ষিকী উদযাপনের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। ছবি : এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের অর্থ হবে পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে। সোমবার (১৮ মার্চ) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস জয়লাভের পর দেওয়া প্রথম বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে এ ধরনের দৃশ্য খুব কম মানুষই দেখতে চাইবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। খবর এনডিটিভির।

১৯৬২ সালের ‘কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের’ পর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের সবচেয়ে গভীর সংকটের সূচনা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে। পুতিন প্রায়ই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কখনোই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন অনুভব করেননি।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত মাসে বলেছিলেন, তিনি ভবিষ্যতে ইউক্রেনে স্থল সেনা মোতায়েনের কথা অস্বীকার করতে পারেন না। অনেক পশ্চিমা দেশ এ ধরনের পদক্ষেপ থেকে এতদিন নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল, তবে বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এতে সমর্থন প্রকাশ করেছিল।

ম্যাক্রোঁর মন্তব্য এবং রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা নিয়ে এক বার্তা সংস্থার প্রশ্নের জবাবে পুতিন বিদ্রূপ করে বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বে সবকিছুই সম্ভব।’

সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিধস জয়ের পর পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা সবার কাছে পরিষ্কার, এমনটি হলে তা হবে আমরা একটি পূর্ণ মাত্রার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে এক ধাপ দূরে থাকব। আমি মনে করি, এই বিষয়ে খুব কম মানুষই আগ্রহী।’

পুতিন আরও বলেন, ‘যদিও ন্যাটোর সেনারা ইতোমধ্যে ইউক্রেনে উপস্থিত রয়েছে। রাশিয়া যুদ্ধের ময়দানে ইংরেজি ও ফরাসি উভয় ভাষার অনেককেই তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে তাদের জন্য ভালো কিছু নেই, কারণ তারা সেখানে প্রচুর সংখ্যায় মারা যাচ্ছে।’

সোমবার ভোরে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন নির্বাচনের ফলাফলকে পশ্চিমাদের অগ্রাহ্য করতে এবং ইউক্রেনে অভিযানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছেন বলে জানান। 

ভ্লাদিমির পুতিন তার নির্বাচনি সদরদপ্তর থেকে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘তারা (পশ্চিমা দেশ) যে কেউ আমাদের যতই ভয় দেখাতে চান না কেন, অথবা যতই আমাদের চেপে ধরার চেষ্টা করা হোক না কেন, আমাদের ইচ্ছাশক্তি, আমাদের সচেতনতাকে ইতিহাসের কেউ কখনোই দাবিয়ে রাখতে পারেনি।’

পুতিন বলেন, ‘তাদের তৎপরতা এখন কাজে দিচ্ছে না, ভবিষ্যতেও দেবে না এবং কখনোই তা হবে না।’

গত রোববার রাশিয়াজুড়ে তিন দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বুথ ফেরত জরিপে সবাই যা আশা করছিল, তাই হয়েছে। পুতিন আরও ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সূত্র অনুসারে ৬০ শতাংশ ভোট গণনার পর পুতিন ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। এই ফলাফলের অর্থ হচ্ছে, ৭১ বছর বয়সী পুতিন ক্ষমতায় থাকাতে জোসেফ স্টালিনের মেয়াদকেও ছাড়িয়ে যাবেন। তিনি ২০০ বছরের মধ্যে রাশিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছেন।

এই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৪ দশমিক ২২ শতাংশ যা নির্বাচনি কর্মকর্তাদের হিসাবে ২০১৮ সালের ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে পুতিনের এই বিজয় নিয়ে কোনো সন্দেহ কখনোই ছিল না, কেননা তার সমালোচকরা বেশির ভাগই হয় জেলখানায়, নয়তো নির্বাসনে অথবা মৃত।