ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোট যেভাবে হয় গণনা
ভারতের লোকসভার সাত ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে গত হয়েছে শনিবার (১ জুন)। ১৮তম এই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রায় ৬৪ কোটি নাগরিক। আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) ঘোষণা করা হচ্ছে ফলাফল। যদিও এর আগে বুথ ফেরত জরিপ বলছে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপির নেতৃত্বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, যেখানে কংগ্রেসের দাবি—তারাই এ নির্বাচনে জিতবে। তবে, বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত লোকসভার বিভিন্ন আসনের নানা কেন্দ্রে ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল বলছে, ৫৪৩টির মধ্যে ২৯৫ আসনে এগিয়ে আছে এনডিএ। খবর এনডিটিভি, আল-জাজিরা, এএফপির।
ভোটগণনা শেষে চূড়ান্ত ফল জানাবে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আর তখনেই বোঝা যাবে, কে হতে চলেছেন ভারতের রাষ্ট্রনায়ক। এখন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে চলে লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা...
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ১৯৬১ সালের ইলেকশন রুলসের ধারা ৫৪ (ক) অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দিনের সকাল ৮টা থেকে সব রাজ্যে একযোগে পোস্টাল বেলট পেপারের ভোট গণনা শুরু হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোট গণনা শুরু হয় এর আধাঘণ্টা পরে।
ইভিএমগুলো একটি কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা তালাবদ্ধ একটি কক্ষে রাখা হয়, যাকে বলা হয় স্ট্রংরুম। সকাল ৭টার দিকে সব দলের প্রার্থী বা নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্ট্রংরুমের তালা খুলে দেওয়া হয়। তালা খুলে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক। গণনা কেন্দ্রে শুধু গণনা কর্মী, রিটার্নিং কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী ও এজেন্টরা থাকতে পারেন।
পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও করা হয় ও তারপর ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটকে গণনা টেবিলে আনা হয়। এবার প্রতিটি ভোট গণনা কেন্দ্রে মোট ১৫টি টেবিল রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি গণনার জন্য ও একটি টেবিল রিটার্নিং কর্মকর্তার জন্য সংরক্ষিত। কোন কর্মচারী কোন টেবিলে গণনা করবেন, তা গোপন রাখা হয়। গণনার দিন সকালে প্রতিটি জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা এলোমেলোভাবে কর্মীদের জন্য কেন্দ্র ও টেবিল বরাদ্দ করেন।
সিসিটিভি ক্যামেরা ও ভিডিওর মাধ্যমে ভোট গণনা পর্যবেক্ষণ করা হয়। মেশিনগুলো টেবিলে রাখার পর প্রতিটি কন্ট্রোল ইউনিটের ইউনিক আইডিসহ সিল মারা হয়। পরে ইভিএমগুলো প্রত্যেক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে দেখানো হয়। কন্ট্রোল ইউনিটে একটি বোতাম থাকে। সেটি টিপলে প্রতিটি প্রার্থীর ভোট তাদের নামের পাশে ইভিএমে প্রদর্শিত হতে শুরু করে।
ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে বের হতে দেওয়া হয় না। দায়িত্বে থাকা কর্মী ও কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ গণনাকেন্দ্রে মুঠোফোন নিয়ে যেতে পারেন না। যদি কোনো দলের এজেন্টের কাছে ভোট গণনায় সন্দেহজনক কিছু মনে হয়, তাহলে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার পর পুনরায় গণনার দাবি জানাতে পারেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের তথ্য ফলাফল শিটে লেখেন। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন ও বিজয়ী প্রার্থীর হাতে বিজয়ের সার্টিফিকেট তুলে দেন।
ভোট গণনা শেষে ইভিএমগুলো আবার স্ট্রংরুমে রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, গণনার পর ৪৫ দিন ইভিএম স্ট্রংরুমে রাখতে হয়।