সৌদি আরবে হজ পালনের সময় এক হাজারের বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো হজ। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও আত্মশুদ্ধির জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ পবিত্র কাবাঘরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। প্রতি বছর জিলহজ মাসে হজ পালন করার উদ্দেশ্যে হজযাত্রীরা সৌদি আরবের মক্কায় জড়ো হন। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম সকল মুসলমানকে তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হজ করা ফরজ। সৌদি আরব জানিয়েছে, এ বছর প্রায় ১৮ লাখের বেশি মানুষ পবিত্র হজে অংশ নিয়েছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এই বছরের হজ পালনের সময় ১ হাজার ৩০১ জন হজযাত্রী মারা গেছেন। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মারা যাওয়া বেশিরভাগ হজযাত্রী নিবন্ধিত ছিলেন না। এই হজযাত্রীদের মধ্যে তীব্র গরমে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে আসার কারণে অনেকে মারা গেছেন। এই বছর হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল, যা সাধারণ তাপমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
সৌদি আরবের সংবাদ সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যারা মারা গেছেন তাদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি লোক হজ পালন করার জন্য সরকারি অনুমতি পাননি এবং পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা ছাড়া সরাসরি সূর্যালোকের নীচে তারা হেঁটেছিলেন। যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বয়স্ক ও অসুস্থ লোক বেশি ছিল।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জালাজেল বলেন, ‘তাপ থেকে তীর্থযাত্রীরা নিজেদের কীভাবে রক্ষা করতে পারেন সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রায় অর্ধ লাখ হজযাত্রীদের চিকিৎসা করেছে। এদের মধ্যে অনেকেরই হজ পালনের অনুমতি ছিল না। এখনো অনেক হজযাত্রী তাপ প্রবাহে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।’
সৌদি আরব পবিত্র হজকে নিরাপদ না করার জন্য বেশ কয়েকবার সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে অনিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরব কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু ব্যবস্থা কিংবা সরকারি হজ পরিবহণের সুবিধা দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মক্কায় তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। যা সাম্প্রতিক সময়ে সবোর্চ্চ। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো যখন তাদের নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে, সেখানে সৌদি আরব হজযাত্রীদের মৃত্যুর বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি বা কোন দেশের কতজন মৃত্যুবরণ করেছে তারও কোনো সরকারি পরিসংখ্যান দেয়নি।
একজন আরব কূটনীতিকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিশরের ৬৫৮ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি ইন্দোনেশীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে ভারত সরকার ৯৮ জন ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, জর্ডান, ইরান, সেনেগাল, সুদান এবং ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলও তাদের নাগরিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।