যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে এই কিয়ার স্টারমার?
একজন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী থেকে রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিতে পরিণত হওয়া ব্যক্তি কীভাবে তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনে দুর্দান্ত কাজের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন, তার অনন্য উদাহরণ গড়েছেন কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রমজীবী শ্রেণির অন্যতম নেতা কিয়ার হার্ডির নামের সঙ্গে মিল রয়েছে ৬১ বছর বয়সী বর্তমান শীর্ষ নেতা কিয়ার স্টারমারের।
নির্বাচনি প্রচারণায় তার বিরোধী পক্ষের অভিযোগ ছিল স্টারমার লন্ডনে বেড়ে ওঠা এক অভিজাত ঘরের সন্তান। তবে স্টারমার এই কথার বিরোধিতা করে প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবা একজন যন্ত্রকার, আমার মা একজন নার্স।’
বিরোধী পক্ষ স্টারমারকে ‘অনুপ্রেরণাহীন’ ও ‘সুযোগসন্ধানী’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তার সমর্থকদের কাছে তিনি বাস্তববাদী ব্যবস্থাপক হিসেবে বেশি পরিচিত। সমর্থকদের আশা, তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েও ক্লান্তিহীনভাবে তার আইন পেশায় যেভাবে কাজ করেছেন, সেভাবে কাজ করে যাবেন।
কপালের ওপর থেকে নেমে আসা চুলের গোছা ও কালো ফ্রেমের চশমা পরিহিত স্টারমার অনেক সমর্থকদের কাছে বেশ রহস্যময় মানুষ হিসেবেও পরিচিত। ‘রাজনীতি হওয়া উচিত সেবার জন্য’-এই কথাটি স্টারমার তার বিভিন্ন নির্বাচনি সমাবেশে বেশি বলে এসেছেন। এ ছাড়া ‘দেশ আগে, পরে দল’ এই কথাগুলোও সাম্প্রতিক প্রচারণায় বলে এসেছেন তিনি। পাঁচজন আলাদা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসন অবসানে ‘পরিবর্তনের’ ডাক দিয়েছিলেন তিনিই।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে অনিচ্ছুক আর্সেনাল ফুটবল ক্লাবের গোড়া সমর্থক স্টারমার রাজনীতিতে আসেন বেশ দেরিতে। নেতা হিসেবে তার ‘বিরক্তিকর’ ভাবমূর্তিকে আড়াল করতেই তিনি বেশি চেষ্টা করেন। তবে তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া জানান, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বেশ হাসি-খুশি ও বিনয়ী।
ভিক্টোরিয়া একজন পেশাদার থেরাপিস্ট হিসেবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করেন। স্টারমার ও ভিক্টোরিয়া দম্পতির রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে, যাদের দুজনই কিশোর-কিশোরী। স্টারমার আগেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেও তিনি শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো কাজ করবেন না। কেননা, তার এই সময়টা বরাদ্দ থাকে পরিবারকে দেওয়ার জন্য।
স্টারমারের জন্ম ১৯৬২ সালে ২ সেপ্টেম্বর লন্ডনের বাইরে। একজন খুবই অসুস্থ মা ও আবেগের বশবর্তী হয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলা বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া স্টারমারের রয়েছে তিন ভাইবোন, যাদের মধ্যে একজনের শ্রবণ সমস্যা ছিল। তার বাবা-মা পশু পছন্দ করতেন। বিশেষ করে, তারা গাধা উদ্ধারের কাজ করতেন। এ ব্যাপারে স্টারমার মজা করে বলতেন, ‘যখনই আমরা কেউ বাড়ি ছাড়তাম, তখন তারা গাধা দিয়ে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেন।’
স্টারমার একজন ভালো সংগীতশিল্পী এবং স্কুল থেকেই তিনি ভায়োলিন বাজাতে পারদর্শী। লিডস ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া শেষে তিনি বাম রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন। ২০০৩ সালে তিনি বন্ধু ও সহকর্মীদের হতবাক করে দিয়ে নর্দার্ন আয়ারর্যান্ডে পুলিশ যাতে মানবাধিকার মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে একটি চাকরিতে যোগ দেন। পাঁচ বছর পর সে সময়কার লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের আমলে তিনি ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্টারমারকে ‘নাইট’ উপাধি দেন। তবে, তিনি ‘স্যার’ হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন খুব কম সময়েই। ২০১৫ সালে কিয়ার স্টারমার নর্থ লন্ডন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে জয়ের কয়েকদিন আগে তার শয্যাশায়ী মা বিরল এক রোগে মারা যান।