ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিশ্ব ব্যবস্থায় নাড়া দিচ্ছেন ট্রাম্প
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো হোয়াইট হাউসে ফেরেননি। তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রথাকে ভেঙে ফেলে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে জাহির করেই চলেছেন।
পরপর মেয়াদে দায়িত্ব না পেয়ে দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর মধ্যেই বিশ্বনেতাদের কাছে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন তিনি। এমনকি অপ্রত্যাশিত আচরণ করার ক্ষেত্রে তার ঝোঁককে এখন প্রত্যাশিত হিসেবেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রাম্প খুব দ্রুতই প্রমাণ করেছেন যে, তিনি চমকপ্রদ বক্তব্য দিতে সক্ষম, যার কারণে তার মিত্ররাও নড়েচড়ে বসেন। তবে তাঁর কথাবার্তায় সন্তুষ্ট তাঁর সমর্থকরা এবং তারা মনে করেন ফলাফল আদায়ের ক্ষেত্রে এটা একরকম কৌশল।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড দখলে সামরিক শক্তি ব্যবহারের ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছেন। যদিও ওই ভূখণ্ডটি ন্যাটোর মিত্র দেশ ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এছাড়া পানামা খাল নিয়ে তার বক্তব্যও আলোচিত হয়েছে যে, জলপথটি ২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র হস্তান্তর করে দিয়েছিল। এছাড়া ট্রাম্প দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ও ন্যাটোমিত্র কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়ে উপহাসও করেছেন। আর আলোচনার ক্ষেত্রে তার প্রিয় এসব উপকরণ বন্ধু এবং শত্রুকেও চাপে ফেলছে।
সম্প্রতি এবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার হুমকিগুলোর বিষয়ে সিরিয়াস কিনা, এরকম এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘আমরা মোকাবিলা করছি এমন হুমকির মতো বিষয়গুলোর প্রতি তিনি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
পানামা খালের বিষয়ে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রভাব এবং আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়ার শক্তির মহড়ার বিষয়ে মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সব সম্ভাবনাকে আলোচনার টেবিলে আনতে চান, সত্যি কথা বলতে যা তার পূর্বসূরিরা অনুসরণ করেনি।’
‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’
২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’ (ফিরে এলো আমেরিকা) আর গতকাল সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টে তার বিদায়ী ভাষণেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বরং তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী।’
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের একজন সিনিয়র নীতি বিশ্লেষক রবার্ট বেনসন। যিনি ট্রাম্পের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছিলেন, ট্রাম্প এখন প্রতিহিংসাপরায়ণ রাশিয়া এবং চীনের হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রবার্ট বেনসন আরও বলেছেন, ‘তিনি (বাইডেন) আমাদের অংশীদার এবং আমাদের মিত্রদের বিচ্ছিন্ন করেছেন, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপিয়দের দূরে সরে যাওয়ার জন্য রাখার চাপ দিচ্ছেন।’
নতুন করে শুরু
আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশটির রাষ্ট্র নীতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেদিকে থেকে বলা যায়, গাজায় ১৫ মাস ধরে চলমান যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে পারে। বন্ধ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত।
এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সোমবার ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত এবং বাইডেনের হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্য প্রধানের সাথে আলোচনা হয়েছে। এর আগে, ট্রাম্পও নির্বাচনি প্রচারণায় গর্ব করে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে একদিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন। এ বিষয়ে ট্রাম্প ইতোমধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে (কিথ কেলগ) ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণার পর থেকে তার কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সফল হবেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় আইন প্রণেতাদের ওয়াশিংটনে সফরে ইতালির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ার লিয়া কোয়ার্টাপেল বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম ট্রাম্প যেহেতু একটি বামপন্থি দল থেকে এসেছেন, সেজন্য ইউক্রেনের ব্যাপারে রিপাবলিকানদের সাথে পূর্ণ আলোচনা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ হবে।
লিয়া কোয়ার্টাপেল বলেছেন, আলোচনায় আমরা যা পেয়েছি তা ঠিক এমন ছিল না। তিনি বলেন, আমরা মার্কিন স্বার্থ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। আশা করছি ট্রাম্প সেভাবেই এগিয়ে যাবেন।