অর্থনীতির চাকা কি ফের সচল করতে পারবেন ট্রাম্প?
করোনা মহামারির প্রভাব, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি তার জন্য বড় পরীক্ষা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে কর হ্রাস এবং কর সংস্কার আইনের মাধ্যমে করপোরেট এবং ব্যক্তি পর্যায়ে কর কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে চেয়েছিলেন। তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছিল এবং বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল।
এছাড়া, ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" নীতির আওতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা ছিল তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রধান অংশ। যদিও এই নীতিগুলোর কিছু সমালোচনা হয়েছিল, তবুও তার ফলে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কিছু শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মুদ্রাস্ফীতি, সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক অস্থিরতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ফিরে আসা অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার নেতৃত্বে আবারও কর কমানো, ব্যবসায়িক নীতিমালার সংস্কার এবং জ্বালানি উৎপাদনে স্বনির্ভরতা আনার মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে।
এ ছাড়া, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস এবং মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে কড়াকড়ি আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্প ও কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করতে আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন।
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিমালা নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। কর কমানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করার ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুদ্রাস্ফীতি কমানো, সরবরাহ শৃঙ্খল পুনরুদ্ধার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি ট্রাম্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। মহামারি-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির জটিলতায় এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী এবং তার অর্থনৈতিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের সাহসী এবং উদ্ভাবনী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ফের শক্তিশালী করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে যদি তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা আবার সচল হতে পারে। তবে তা কতটা দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই হবে, তা নির্ভর করবে তার নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা সচল করতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন।