যে কারণে মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারে ডিপসিককে আটকানো কঠিন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/30/deepseek.jpg)
হোয়াইট হাউসের শীর্ষ উপদেষ্টারা এই সপ্তাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, চীনের ডিপসিক সম্ভবত এমন একটি পদ্ধতির সুবিধা নিতে পারে, যা ‘ডিস্টিলেশন’ নামে পরিচিত এবং অনুমান করা হয় যে এটি মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে।
এই প্রযুক্তিটি মূলত একটি এআই মডেলকে অন্য একটি এআই মডেল থেকে শিখতে সহায়তা করে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে বলে সিলিকন ভ্যালির নির্বাহী ও বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন।
চলতি মাসে ডিপসিক এমন একটি নতুন এআই মডেল উন্মোচন করেছে, যা কম খরচে কার্যক্ষমতার দিক থেকে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ের মতো জায়ান্টদের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই চীনা কোম্পানি তাদের কোড সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রকাশ করেছে।
অনেক প্রযুক্তিবিদ মনে করছেন, ডিপসিক তার মডেল তৈরির ক্ষেত্রে মার্কিন মডেলগুলোর সাহায্য নিয়েছে। ডিস্টিলেশন পদ্ধতিতে একটি পুরনো, শক্তিশালী এআই মডেল নতুন মডেলের উত্তরের গুণগত মান যাচাই করে, যার ফলে পুরনো মডেলের অর্জিত জ্ঞান নতুন মডেলে স্থানান্তরিত হয়।
মার্কিন শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ
এই ডিস্টিলেশন পদ্ধতি এআই শিল্পে একটি সাধারণ প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি ওপেন এআইয়ের মতো কিছু মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সেবা সংক্রান্ত শর্ত লঙ্ঘন করতে পারে।
ওপেন এআইয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংস্থাটি জানে যে চীনের কিছু গ্রুপ মার্কিন এআই মডেলের অনুকরণ করতে ডিস্টিলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করছে এবং ডিপসিক এভাবে অবৈধভাবে মডেল তৈরি করেছে কিনা, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক ডাটা ব্রিকসের এআই বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাভিন রাও বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকে শেখা এআই শিল্পে সাধারণ ঘটনা। তিনি এর তুলনা টানেন গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গে, যারা একে অপরের ইঞ্জিন কেনে ও বিশ্লেষণ করে।
মার্কিন সরকারের কঠোর অবস্থান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ডিপসিক সম্ভবত মার্কিন এআই প্রযুক্তি অবৈধভাবে ব্যবহার করেছে এবং তিনি ভবিষ্যতে এটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
লুটনিক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে ডিপসিক সম্পূর্ণ স্বচ্ছ উপায়ে কাজ করেছে। এটা একেবারেই হাস্যকর। আমি কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব এবং আমাদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এসব বাস্তবায়ন করব।’
এআই ও ক্রিপ্টো বিষয়ক হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও ডিপসিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছেন এবং কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডিপসিকের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
ওপের এআই জানিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের সঙ্গে মিলে প্রযুক্তি সুরক্ষার কাজ করবে।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/01/30/deepseek_inner.jpg)
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
তবে প্রযুক্তিবিদদের মতে, ডিস্টিলেশন পদ্ধতি আটকানো কঠিন হবে।
ডিপসিক দেখিয়েছে, মাত্র কয়েক লাখ নমুনা ডাটার মাধ্যমে ছোট মডেলগুলোর দক্ষতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
যেহেতু জনপ্রিয় চ্যাটবট চ্যাট জিপিটির মতো সেবা প্রতিদিন শত শত মিলিয়ন ব্যবহারকারীর ডাটা সংগ্রহ করে, তাই এত অল্প পরিমাণ তথ্য শনাক্ত করা কঠিন। বিশেষ করে, মেটার লামা বা ফরাসি স্টার্টআপ মিস্ত্রালের মতো ওপেন-সোর্স মডেল সহজেই ডাউনলোড করে ব্যক্তিগত ডাটা সেন্টারে ব্যবহার করা যায়, যা পরিষেবা শর্ত লঙ্ঘন করলেও শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।
থমভেস্ট ভেঞ্চার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমেশ পদ্ভাল বলেন, ‘যদি ওপেন-সোর্স মডেল পাওয়া যায়, তাহলে ডিস্টিলেশন থামানো অসম্ভব।’
মেটা জানিয়েছে, তাদের লামা মডেলের লাইসেন্স অনুযায়ী, কেউ যদি ডিস্টিলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে, তবে সেটি প্রকাশ করতে হবে। ডিপসিক তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানিয়েছে যে, তারা কিছু ক্ষেত্রে লামা ব্যবহার করেছে, তবে শুরু থেকেই এটি ব্যবহার করেছে কিনা, তা উল্লেখ করেনি।
এদিকে, মার্কিন সরকারের এক সূত্র জানিয়েছে, ডিস্টিলেশন আটকানোর একমাত্র উপায় হতে পারে কড়াকড়ি "নো-ইয়োর-কাস্টমার" (কেওয়াইসি) নিয়ম চালু করা, যা ব্যাংকিং খাতের মতো কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো কঠোর নীতি চূড়ান্ত হয়নি।
গ্রোকের প্রধান নির্বাহী জনাথন রস বলেছেন, তারা তাদের ক্লাউড থেকে চীনের আইপি অ্যাড্রেস ব্লক করে দিয়েছে, যাতে চীনা কোম্পানিগুলো তাদের এআই মডেলের সুবিধা নিতে না পারে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, এটি যথেষ্ট নয়, কারণ বিকল্প উপায়ে বাধা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
জনাথন রস বলেন, ‘এটি আসলে একটা বিড়াল-ইঁদুর খেলা। এর কোনো নির্দিষ্ট সমাধান নেই। কেউ যদি ভালো সমাধান বের করতে পারে, তাহলে আমরা সেটি প্রয়োগ করব।’