হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর জানাজায় লাখো মানুষ

লেবাননের লাখো মানুষ হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছেন। তিনি গত সেপ্টেম্বরে দেশটির রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। নিরাপত্তার কারণে হাসান নাসরুল্লাহর জানাজা ও দাফন বিলম্বিত করা হয়। তবে আজ রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় বৈরুতের ক্যামিল চামুন স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে জানাজা অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আয়োজকরা মাঠে হাজার হাজার অতিরিক্ত আসন এবং স্টেডিয়ামের বাইরেও বহু আসনের ব্যবস্থা করেছেন, যেখানে শোকাহতরা বিশাল পর্দায় মূল অনুষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। জানাজার আগে দক্ষিণ বৈরুতের দেয়াল ও সেতুতে নাসরুল্লাহ এবং তার উত্তরাধিকারী হাশেম সাফিউদ্দিনের বিশাল প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। হাশেম সাফিউদ্দিন নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ পরে আরেকটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
বৈরুতের জানাজা অনুষ্ঠানস্থল থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা জেইনা খোদর বলেন, লেবাননের শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য নাসরুল্লাহ একজন ‘পিতৃতুল্য ব্যক্তিত্ব’ ছিলেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিজবুল্লাহর অনুসারী রয়েছেন। হিজবুল্লাহর নতুন সেক্রেটারি জেনারেল নাইম কাসেম জানাজার আগে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহর কর্মকর্তা আলী দামৌশ গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ৬৫ দেশের প্রায় ৮০০ বিশিষ্ট ব্যক্তি জানাজায় যোগ দেবেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার ব্যক্তি ও কর্মী উপস্থিত থাকবেন।
দামৌশ ইসরায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রতিটি বাড়ি, গ্রাম ও শহর থেকে আসুন, যাতে আমরা শত্রুকে বলতে পারি, এই প্রতিরোধ টিকে থাকবে এবং মাঠেও আমরা প্রস্তুত।’
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা নাসরুল্লাহ ও সাফিউদ্দিনকে ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে, এমন আশঙ্কায় অস্থায়ীভাবে গোপন স্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বিমানবন্দর সড়কের কাছে নাসরুল্লাহকে সমাহিত করা হবে। সাফিউদ্দিনকে তার নিজ শহর দক্ষিণ লেবাননের দেইর কানুন এন-নাহরে দাফন করা হবে।

এদিকে, লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জানাজা অনুষ্ঠানের সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বৈরুতের ওপর দিয়ে কম উচ্চতায় উড়তে দেখা গেছে। গত ২৭ নভেম্বর থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি ঠুনকো যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। এদিন ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা আন্তঃসীমান্ত যুদ্ধের অবসান ঘটে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে দক্ষিণ লেবানন থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল, কিন্তু ইসরায়েল তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর সময়সীমা ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই সময়সীমায় দক্ষিণ লেবাননের শহরগুলো থেকে ইসরায়েল সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তবে পাঁচটি সীমান্ত চৌকিতে দেশটির সামরিক উপস্থিতি বজায় রয়েছে।