তর্কাতর্কির পরও ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত সম্ভব : জেলেনস্কি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখনও মেরামত করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের নেতার তীব্র বাগবিতণ্ডা হয়।
এরপর ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক কি উদ্ধার করা যেতে পারে? এর জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘অবশ্যই।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্ক ‘দুজনের বেশি প্রেসিডেন্টের’ ওপর নির্ভর করে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার অনেক বৃহৎ ও উন্নত সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের ওয়াশিংটনের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘আপনার সমর্থন ছাড়া এটি কঠিন হবে।’
এদিন হোয়াইট হাউসে মার্কিন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে বাগবিতণ্ডার সময় ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কির উদ্দেশে উচ্চস্বরে কথা বলেন। তাকে কৃতজ্ঞ না হওয়া এবং প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি না মানার জন্য অভিযুক্ত করেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স।
এ সময় ট্রাম্প জেলেনস্কির উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কাছে এখন কোনো কার্ড নেই। হয় তুমি একটা চুক্তি করবে, নয়তো আমরা (যুদ্ধ থেকে) সরে যাব। আর যদি আমরা সরে যাই, তাহলে তুমি লড়াই করবে। আমার মনে হয় না, এটা সুন্দর হবে।’
এর কিছুক্ষণ পরেই জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা হয়। এ সময় ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, ‘তিনি যখন শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন তিনি ফিরে আসতে পারবেন।’
পরে শুক্রবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, জেলেনস্কি তার হাত বাড়াচ্ছেন। তবে তার অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধে রাজি হওয়া উচিত।
তবে জেলেনস্কি ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত না... আমরা খারাপ কিছু করেছি।’ তবে বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে হওয়াটা যথযথ মনে করছেন না তিনি।
পরে সংবাদমাধ্যম সিএনএনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জেলেনস্কিকে এমন একটি বৈঠকের মাধ্যমে সময় নষ্ট করার জন্য ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানান।
হোয়াইট হাউসে আলোচনায় ট্রাম্প যখন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য ইউক্রেনকে ‘আপস’ করতে হবে, তখন এ বাগবিতণ্ডা ঘটে। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের ভূখণ্ডে একজন খুনির সঙ্গে আপস করা উচিত নয়।’

বৈঠকে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থিত শান্তি প্রচেষ্টায় রাশিয়ার আগ্রাসন রোধ করা সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন জেলেনস্কি। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স তখন তাকে বাধা দেন এবং এটিকে ‘অসম্মানজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প মার্কিন নীতিতে হঠাৎ ইউ-টার্ন এনে কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্রদের ভয় পাইয়ে দিয়েছেন। পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তিনি। তবে তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করেননি।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে বলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘অনেকবার কথা বলেছেন, যা প্রতিবার সংবাদে আসেনি।’
ট্রাম্প গত সপ্তাহে জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে অভিহিত করেন। একইসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, পুতিনের ওপর আস্থা রাখেন যে, তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কথা রাখবেন।
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিনি যুদ্ধরত প্রধান পক্ষগুলোর কোনোটির সমালোচনা করতে পারবেন না। তবে ফক্স নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময়, জেলেনস্কি বলেন, তিনি চান ট্রাম্প সত্যিই তাদের পক্ষে আরও জোরালোভাবে থাকুক।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার কিয়েভ জানায়, রাশিয়ার বাহিনী তাদের কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সীমান্তে আক্রমণ চালিয়েছে।