সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতে ৬০০ জনের প্রাণহানি

দক্ষিণ সিরিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই সংঘাত সাম্প্রদায়িক রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি অফ হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর)। গত রোববার (১৩ জুলাই) থেকে সুওয়াইদা প্রদেশে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে ‘উল্লেখযোগ্য বর্বরতার প্রাদুর্ভাব’ রেকর্ড করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় এসওএইচআর জানিয়েছে, দ্রুজ ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তিন শতাধিক সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪৬ জন যোদ্ধা ও ১৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। যাদের ৮৩ জনকে সরকারি বাহিনী ‘সংক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড’ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, কমপক্ষে ২৫৭ জন সরকারি কর্মী ও ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন বেদুইন বেসামরিক নাগরিক দ্রুজ যোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছেন। বেদুইন ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণেই এই লড়াই শুরু হয়েছিল।
এদিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও ১৫ জন সরকারি কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা দ্রুজদের রক্ষা করতে ও সরকারি বাহিনীকে সুওয়াইদা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্যই এই হামলা চালিয়েছে।
এসওএইচআর-এর এই পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে, নিরাপত্তা সূত্রগুলো মৃতের সংখ্যা ৩০০ বলে জানিয়েছে। আরেকটি পর্যবেক্ষণ দল— সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, তারা কমপক্ষে ১৬৯ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর নথিভুক্ত করেছে।
সুওয়াইদায় অচলাবস্থা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দ্রুজ-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সুওয়াইদা থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহারের পর একটি অস্বস্তিকর শান্ত অবস্থা বিরাজ করছে। বাসিন্দারা ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের দৃশ্যের পাশাপাশি রাস্তায় মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে সংঘর্ষের পর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন সরকারের যোদ্ধাদের গাড়িবহর সোমবার (১৪ জুলাই) শহরে প্রবেশ শুরু করে। কিন্তু এর পরপরই লড়াই আরও তীব্র হয় এবং সিরিয়ার দ্রুজদের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়, যাদের ধর্ম শিয়া ইসলামের একটি শাখা এবং নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় ও বিশ্বাস রয়েছে।
সিরিয়ার সরকার বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। তবে, একজন বিশিষ্ট দ্রুজ নেতা শেখ হিকমত আল-হাজরি, সেই যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে ‘আমাদের প্রদেশকে গ্যাং থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’ না হওয়া পর্যন্ত আরও লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন, যা সরকারি বাহিনীর উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ ও সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল সিরিয়ার ওপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তার স্বার্থ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে চায়। নেতানিয়াহু বলেন, সংঘর্ষে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ আংশিকভাবে দ্রুজদের রক্ষা করার জন্য করা হয়েছিল, তবে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীকে দেশের দক্ষিণে মোতায়েন করা থেকে বিরত রাখার জন্যও করা হয়েছিল। তিনি যোগ করেন, এটিই আমাদের নীতি হবে, আমরা সিরিয়ার সেনা বাহিনীকে দামেস্কের দক্ষিণে প্রবেশ করতে দেব না ও দ্রুজদের কোনো ক্ষতি করতে দেব না।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের আশেপাশে মারাত্মক ক্ষতি হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরায়েলের বারবার আক্রমণের এটি একটি নাটকীয় বৃদ্ধি।

বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় এক টেলিভিশন বিবৃতিতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি আহমেদ আল-শারা ইসরায়েলের আক্রমণকে তার দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভূমির ঐক্য, আমাদের জনগণের মর্যাদা ও আমাদের জাতির স্থিতিস্থাপকতা রক্ষার জন্য একটি যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছি। তিনি আরও যোগ করেন, পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার পতনের পর থেকে ইসরায়েলি সত্তা, যারা ধারাবাহিকভাবে আমাদের স্থিতিশীলতাকে লক্ষ্য করে আসছে ও বিভেদের বীজ বপন করেছে, তারা এখন আবারও আমাদের পবিত্র ভূমিকে অন্তহীন বিশৃঙ্খলার রঙ্গমঞ্চে পরিণত করতে চাইছে।
সিরিয়ার দ্রুজদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে, আপনার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। বিভেদ বপনের যেকোনো প্রচেষ্টা (বিদেশি অথবা দেশীয়) আমরা প্রত্যাখ্যান করি।