এবারের নোবেল ‘শান্তি পুরস্কার’ জিততে পারবেন ট্রাম্প?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার দাবি করেছেন, তিনি একাধিক যুদ্ধ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গত ১৮ আগস্ট ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক শীর্ষ সম্মেলনের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ছয়টি যুদ্ধ করেছি, আমি ছয়টি যুদ্ধ শেষ করেছি’, যা তিনি পরে সাতটি যুদ্ধে সংশোধিত করেন।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই দাবিকে ‘স্বল্পমেয়াদে যুদ্ধ বন্ধ করা ও সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করার মধ্যে বিশাল পার্থক্য’ হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ প্রায়শই সংঘাত সমাধানের পরিবর্তে ‘সংঘাত ব্যবস্থাপনা’ হিসাবে বিবেচিত হয়।
এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের শেষ তারিখ ছিল ৩১ জানুয়ারি। ওভাল অফিসে তাঁর দুই মেয়াদে তাঁকে ১০ বারেরও বেশি নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতসহ যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও নরওয়ের আইন প্রণেতারা তাঁকে মনোনীত করেছেন। এই বছর মোট ৩৩৮ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে ইসরায়েল ও হামাস ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে স্বাক্ষর করে। এরপরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তেল আবিবের রাস্তায় মানুষ ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করে। এমনকি নেতানিয়াহুও যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের এ ‘মহান প্রচেষ্টা’র কথা স্বীকার করেছেন।
ট্রাম্পের নোবেল জিততে পারার সম্ভাবনা কতটুকু?
নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত ফাইনাল ঘোষণার আগেই নেওয়া হয়ে যায়, তাই পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক নিনা গ্রেগারের মতে, গাজার রাতের ঘটনাবলি আগামীকাল শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা খুবই কম।
তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা গাজায় স্থায়ী ও টেকসই শান্তির দিকে পরিচালিত করে, তাহলে কমিটিকে আগামী বছরের আলোচনায় এটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।
নোবেল কমিটির ডেপুটি লিডার আসলে তোজে বলেছেন, ট্রাম্পের মতো প্রার্থীরা পুরস্কার জেতার জন্য যে প্রচারণা বা লবিং চালান, তা উল্টো নেতিবাচক ফল নিয়ে আসে। অর্থাৎ, এমন প্রচারণার কারণে তাদের জেতার সম্ভাবনা আসলে কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা কেন ট্রাম্পকে ভুল মনে করেন?
নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার মূল কারণ হলো আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী, এই পুরস্কার সেই ব্যক্তিকেই দেওয়া উচিত, যিনি বিভিন্ন জাতির মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে সবচেয়ে বেশি বা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করেছেন।
মিস গ্রেগারের মতে, ট্রাম্পের নীতিগুলো এই উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পুরোনো মিত্রদের ওপর বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন।
এছাড়াও, সমালোচকরা ট্রাম্পের বিতর্কিত অভিবাসন নীতি, আইসিই সংস্থার ব্যবহার ও শিক্ষাক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের ভূমিকা সংকোচনের পরিকল্পনার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন, যা নোবেল পুরস্কারের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে ব্যাহত করতে পারে।
কার হাতে উঠবে নোবেল শান্তি পুরস্কার?
কমিটি জানিয়েছে, এই বছর মনোনীত ৩৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে (২৪৪ জন ব্যক্তি ও ৯৪টি সংগঠন) থেকে সম্ভাব্য বিজয়ীরা হতে পারেন—
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব : ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া।
মানবিক সংস্থা : সুদানস এমার্জেন্সি রেসপন্স রুম ও ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের মতো মানবিক সংস্থাগুলো।
সংস্থা ও সাংবাদিক : জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মতো জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, গাজায় নিহত মিডিয়া কর্মীদের কথা মাথায় রেখে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস বা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সকে পুরস্কৃত করা হতে পারে।
অতীতে যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছেন
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ১৯০৬ সালে থিওডোর রুজভেল্ট শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, উড্রো উইলসন নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯১৯ সালে, জিমি কার্টার ২০০২ সালে ও বারাক ওবামা ২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।