কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মজয়ন্তী আজ
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’... দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদে গানটি বাজানো যেন বাঙালির রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। রেডিও, টিভি এমনকি পাড়া-মহল্লায় গানটি বেজে ওঠে। গানের তালে আনন্দে মাতে সবাই। আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আজ পালন করছেন বিশেষ দিনটি। এই গানের রচয়িতা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির আবেগ-অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চিরবিদ্রোহী এ কবির ১২১তম জন্মজয়ন্তী আজ।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। তাঁর ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি অল্প বয়সে মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়।
কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের কুড়ি ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তাঁর কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কোমল ও কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয়ভাবে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। তবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু সংগঠন ভার্চুয়ালি নজরুলজয়ন্তী উদযাপন করছে। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারের জন্য ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শিরোনামে ৫৫ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী প্রচারিত।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে থাকছে ‘শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় যা বিকেল ৩টায় একাডেমির ফেসবুক পেজে প্রচারিত হবে। ‘নবযুগ ওই এলো ওই’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে অনুষ্ঠানটি।