প্রয়াত শিল্পী খোকনের ‘তুমি রবে নিরবে’
ইতিহাস রচনা ও পরিবর্তনের নায়ক গণমানুষ। প্রতিকূল অবস্থা শিল্পী-চেতনায় সময়, সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুশাসনের মধ্যে অবস্থান করে স্বাধীন চিন্তা বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কঠিন তাই চল্লিশের দশকে গড়ে উঠে ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’। এই গ্রুপের না হয়েও চিত্রকলার নিরিক্ষাধর্মী কাজের ভিন্ন এক দিকবলয় সৃষ্টি করেছিলেন শিল্পী এহসানুল আলম খোকন। প্রয়াত এই শিল্পীর আঁকা ছবি নিয়ে প্রকাশ হলো ‘তুমি রবে নিরবে’ শীর্ষক শিল্পকর্মের অ্যালবাম।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এই অ্যালবামের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা উৎসবে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, শিল্পী রফিকুন নবী, চিত্রসমালোচক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ ও লেখক হায়দার আকবর খান রনো, সাংবাদিক, লেখক ও বইটির প্রধান সম্পাদক দীপংকর গৌতম ও প্রকাশক রবীন আহসান।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘শিল্পীরা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থাতে তাদের মতো করে দাঁড়িয়েছেন। শিল্পীরা হারিয়ে যান না উল্লেখ করে তিনি শিল্পী এহসানুল আলম খোকনের ছবির অ্যালবামের সাফল্য কামনা করেন।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘প্রচার বিমুখ নিভৃতচারী ও আত্মমগ্ন মানুষ ছিলেন খোকন। তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়নি এ দেশে। তাঁর বোনদের উদ্যোগে আমেরিকায় একটা প্রদর্শনী হয়েছে। তাঁর ছবিগুলো দিয়ে ঢাকাতেও একটা প্রদর্শনী করা যেতে পারে। তাঁর ছবি ও কাজের মধ্য দিয়েই তাঁকে মনে রাখা হবে।’
শিল্পী মোস্তাফা মনোয়ার বলেন, ‘খোকন আমার পারিবারিকভাবে পরিচিত-আত্মীয়। তাদের বাড়িতে আমার যাওয়া-আসা ছিল। ছোটবেলাতেই সে দেয়ালে ছবি আঁকত। তাঁকে বলতাম তুমি সিরিয়াসলি ছবি আঁকনা কেন, সে তখন সমাজের বহু সমস্যার কথা বলত, আমি বলতাম সেই সবই তুমি আঁক। আমি ভীষণ ভাবে তাঁকে উৎসাহ দিতাম। সেই খোকনের এত সুন্দর একটা বই বের হয়েছে সেই জন্য ধন্যবাদ দেই তাঁর বোন ও পরিবারকে এবং এর সাথে যাঁরা যুক্ত সবাইকে।’
শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘খোকন এবং আমি একই বছর ম্যাট্রিক পাস করেছি। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মাধ্যমে। আমরা যাঁরা ছবি আঁকি এখন এটা আমাদের কাছে পেশা আর খোকনের ছবি আঁকা ছিল প্যাশন। সুলিয়ালিজম ধাঁচের কাজ করেছেন। তাঁর এই বইতে যা ছবি আছে এটাই শেষ নয়, তাঁর আরো যেসব ছবি আছে সেগুলো প্রকাশ হক তাহলেই তাঁকে মনে রাখা হবে।’
চিত্রসমালোচক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই বইটিতে যে ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে তার প্রায় সবই পরাবাস্তবধর্মী ছবি। তাঁর ছবি পরিপাটি বা নিটল নয় তবে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট।’
মনজুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে তাঁর শিল্প সৃষ্টির সময় তাঁকে আমরা পাইনি। তাঁর কাজগুলো নিয়ে একটা প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁকে সবার সামনে তুলে আনতে হবে।’
৫০০ টাকা মূল্যের বইটি প্রকাশ করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী।